ময়মনসিংহ প্রতিনিধি।।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে গভীর রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত ৫ রোগীকে মারধর করেছে প্রতিষ্ঠানের আউটসোর্সিংয়ে কর্মরত সৌদী সিকিউরিটি সার্ভিসের কর্মীরা। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। সেই সঙ্গে গঠিত হয়েছে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি।
মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন মমেক হাসপাতালের সহকারি পরিচালক (প্রশাসন) ডাঃ মো: মাঈন উদ্দিন।
এর আগে গত ২৮ অক্টোবর রাত দেড়টায় মমেক হাসপাতালের ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে এই মারপিটের ঘটনায় ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক সেনাবাহিনী, জেলা পুলিশ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, মহানগর ও জেলা ছাত্রদলসহ ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে হাসপাতালের ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের ওয়ার্ড মাষ্টার মোঃ শফিকুল ইসলাম বাদি হয়ে ৪ জনের নাম উল্লেখ করে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাত আরও ৪ থেকে ৫ জনকে আসামি করা হয়।
মামলার এজাহারে বাদি উল্লেখ করেন- ঘটনার সময় হাসপাতালের আউটসোসিংয়ে কর্মরত ট্রলিবয় রূহান হোসেন রূপু একজন রোগী নিয়ে ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে লাইট জ্বালিয়ে দেয়। এ সময় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত একরোগী লাইট জ্বালাতে নিষেধ করলে ট্রলিবয় রূপু আহত রোগীদের ওপর ক্ষিপ্ত হলে কথা কাটাকাটি করে। একপর্যায়ে রূপু অন্য ট্রলিবয়দের ডেকে এনে আহত আন্দোলন কর্মীদের মারধর করে। এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহায়তায় থানায় মামলা করা হয়েছে।
এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত রূহান হোসেন রূপু (২০) এবং মোশারফ হোসেন (৩৬) কে গ্রেপ্তার করে ইতোমধ্যে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোঃ শামীম হোসেন। তিনি বলেন, খবর পেয়ে ছাত্র সমন্বয়কসহ সংশ্লিষ্টদের সহযোগীতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করা হয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত করে জড়িত অন্যদের বিচারের আওতায় আনা হবে।
এদিকে এ ঘটনায় হাসপাতালের আউটসোসিংয়ের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সৌদী সিকিউরিটি সার্ভিসের টেন্ডার বাতিলের দাবি জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মোঃ আশিকুর রহমান আশিক ও গূকুল সূত্রধর মানিক। তাদের অভিযোগ, দীর্ঘ সময় ধরে ফ্যাসিষ্টদের দোসর সৌদী সিকিউরিটি সার্ভিসের ঠিকাদার আবুল হাসেম এবং মহানগর আওয়ামীলীগ নেতা, শহীদ সাগর হত্যা মামলার আসামি আসাদুজ্জামান রুমেলের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট হাসপাতালের বিভিন্ন কর্মকান্ডে লাগামহীন অনিয়ম, দুর্নীতি করে চলছে। টেন্ডারবাজি থেকে শুরু করে রোগীদের খাবারে অনিয়ম-দুর্নীতি করে তারা প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করছে। ওই সিন্ডিকেটটি হাসপাতালের ভেতরে আধিপত্য ধরে রাখার জন্য তাদের অনুগত উশৃংখল যুবকদের আউটসোসিংয়ে নিয়োগ দিয়ে বাণিজ্য করছে। অবিলম্বে সৌদী সিকিউরিটি সার্ভিসের টেন্ডার বাতিল করে হামলা ও মারপিটের ঘটনায় প্রত্যক্ষ জড়িত এবং নেপথ্যের মদদদাতাদের গ্রেপ্তার করতে হবে। অন্যথায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সৌদী সিকিউরিটি সার্ভিসের ঠিকাদার আবুল হাসেম বলেন, যারা মারধরের সঙ্গে জড়িত তারা আমার প্রতিষ্ঠানের কর্মী। এই বিষয়ে আমার কোন বক্তব্য নেই।
এই বিষয়ে মমেক হাসপাতালের সহকারি পরিচালক (প্রশাসন) ডাঃ মোঃ মাঈন উদ্দিন বলেন, ইতোমধ্যে ঘটনার তদন্তের ৪ সদস্যের কমিটি গঠন হয়েছে। আগামী ৩ কর্মদিবসের মধ্যে এই কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে। প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, রোগীদের মারধরের ঘটনার সঙ্গে টেন্ডার বাতিলের কোন সর্ম্পক নেই। তারপরও ছাত্রদের দাবির প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত গ্রহন করবেন।