গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধিঃ
পটুয়াখালীর গলাচিপায় সফলতার মুখ দেখছেন তরমুজ চাষীরা। বিগত বছরের মত এবার ভালো ফলনের কারণে লাভের মুখ দেখবে বলে আশা করছেন তরমুজ চাষীরা। শনিবার (৪ মার্চ) উপজেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে প্রায় একই চিত্র চোখে পড়েছে। তবে কয়েকজন কৃষক ব্যতিক্রমী কথাও বলছেন বেশির ভাগ কৃষকের লাভ হলেও অনেকে অভিজ্ঞতার অভাবে তেমন লাভবান হচ্ছেন না। গলাচিপা পৌর শহরের প্রেম পোল নামক স্থানের অভিজ্ঞ তরমুজ চাষী চুন্নু মিয়া বলেন, এ বছরও আমি প্রচুর ফলন পেয়েছি। আমার প্রায় ৫ গুণ লাভ হবে। আমি ৪ লাখ টাকা ব্যয় করে এখন ২০ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারব। শুনেছি অনেকের তেমন ফলন হয় নি। এর মূল কারণ হচ্ছে যে জমিতে পলি পড়ে সেখানে তরমুজ ফলন বেশি হয়। আর যে জমি ওয়াপদার ভিতরে থাকে সেখানে দুই-তিন বছর পর ফলন কমতে শুরু করে। এ বছর গলাচিপা ইউনিয়নের তরমুজ চাষী মো. শফি বলেন, আমরা ৫ জনে মিলে ওয়াপদার ঢালে প্রায় ২০ কানি (৫০ একর) জমিতে তরমুজ দিয়েছি। ফলনও ভালো হয়েছে। এতে আমরা প্রায় ৯০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পাব বলে আশা করছি। এছাড়া ১৫ একর জমিতে হাইব্রিড জাতীয় বিভিন্ন রঙের ও জাতের তরমুজ চাষ করে উপজেলায় সাড়া ফেলে দিয়েছেন ব্যতিক্রমী কৃষক আল আমিন। তার ক্ষেতের তরমুজের কোনোটার ভেতর লাল, কোনোটা হলুদ বা কমলা রঙের। স্বাদও মিষ্টি। ফলনও হয়েছে বেশি। স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানায়, গলাচিপা উপজেলায় এবার রেকর্ড পরিমাণ তরমুজের ফলন হয়েছে। গলাচিপায় ইতোমধ্যে নানা প্রজাতির উচ্চ ফলনশীল (উফশী) তরমুজ বাজারে আসতে শুরু করেছে। ঢাকা-বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন চালান হচ্ছে হাজার হাজার তরমুজ। শত শত ট্রাকে করে প্রতিদিন তরমুজ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে। আবার সারিবদ্ধভাবে অনেক ট্রাক তরমুজে লোড করার অপেক্ষায় আছে। এবার এখন পর্যন্ত বাজার বেশ চড়া। চাষীরাও লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছে। উপজেলার আমখোলা, গোলখালী, ডাকুয়া ইউনিয়নের ফুলখালী, আটখালী, গলাচিপা ইউনিয়নের মুরাদনগর, ইটবাড়িয়া, বোয়ালিয়া, পানপট্টি, রতনদি তালতলী, উলানিয়া, চিকনিকান্দিসহ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, সর্বত্রই তরমুজের ক্ষেত। আবার কিছু ক্ষেতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। প্রায় সবাই তরমুজ কাটা আর মহাজনের হাতে তুলে দেওয়াসহ ক্ষেত পরিচর্যায় কীটনাশক ও সেচ দিতে ব্যস্ত। এসব কিছুর মধ্যে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকার এবং মহাজনরা তরমুজের গ্রামগুলোতে এসেছেন। গোলখালী ইউনিয়নের কৃষক জহিরুল খান জানান, তিনি এবার সাত একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। তরমুজের চাষ করতে গিয়ে মোট ৫ লাখ টাকার ওপর খরচ হয়েছে। তিনি আশা করেছিলেন তরমুজ বিক্রি করে খরচ বাদ দিয়ে ১০ লাখ টাকা লাভ করবেন। গলাচিপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরজু আক্তার বলেন, এবার উপজেলায় তরমুজ উৎপাদন পাঁচ হাজার টন ছাড়িয়ে যাবে। উপজেলা কৃষি অফিসের হিসাব অনুযায়ী, এবার গলাচিপা উপজেলায় মোট ৭ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে বেশি।