আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি।
খালের মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে বরগুনার আমতলী উপজেলার চাওড়া ইউনিয়ন যুবদলের বহিস্কৃত সভাপতি মোঃ মোমেন আকনকে (৩৬) দাঁড়ালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুত্বর আহত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহবুবুল ইসলাম মাহবুবের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নের কাউনিয়া গ্রামের চাঁনমিয়া সর্দারের বাড়ির সামনে ওই ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা আহত মোমেনকে উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে প্রেরণ করেন। আহত মোমেন আকন একই ইউনিয়নের বৈঠাকাটা গ্রামের আব্দুল মন্নান আকনের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আমতলী উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নের কাউনিয়া জলমহালে দুই পারের বাসিন্দাদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মাছ চাষ করে আসছেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহাবুব। বৃহস্পতিবার সকালে মাছ বিক্রির জন্য ওই খালের মাছ ধরেন তারা। চাওড়া ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য বিএনপি নেতা সফেজ প্যাদার ফোন পেয়ে চাওড়া ইউনিয়ন যুবদলের বহিস্কৃত সাবেক সভাপতি মোমেন আকন ২-৩ জন কর্মী নিয়ে খালের পাড়ে অবস্থিত চাঁনমিয়া সর্দারের পাড়ির সামনে উপস্থিত হন। উপস্থিত হওয়া মাত্র উভয় পক্ষের মধ্যে বাকবিতন্ডা শুরু হয়। বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে মাহবুবের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা মোমেন আকনকে দেশীয় দাঁড়ালো অস্ত্র রামদা ছেনা দিয়ে এলোপাথারি কুপিয়ে গুরুতর জখম করেন।
রামদার কোপে মোমেন আকনের বাম চোখ, দুই পা, দুই হাত ও উড়–তে গুরুতর জখম হন। এসময় তার ডাক চিৎকার শুনে স্থানীয়রা উদ্ধার করে আমতলী হাসপাতালে নিয়ে আসেন। স্বজনরা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন।
আহত চাওড়া ইউনিয়ন যুবদলের বহিস্কৃত সভাপতি মোঃ মোমেন আকন অভিযোগ করে বলেন, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহবুব দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে গ্রামবাসীদের দোহাই দিয়ে কাউনিয়া খালে মাছ চাষ করে একাই ভোগ দখল করে আসছেন। গ্রামবাসীদের অভিযোগের পর এবং চাওড়া ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য বিএনপি নেতা সফেজ প্যাদার নিকট থেকে খবর পেয়ে আমি ২-৩ জন কর্মী নিয়ে ঘটনা জানার জন্য কাউনিয়া গ্রামে যাই। ঘটনাস্থলে যাওয়া মাত্র মাহবুবের নেতৃত্বে ৩০-৪০ জনে মিলে ধারালো রামদা, ছেনা দিয়ে আমাকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। আমি এঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
অভিযুক্ত উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহবুবুল ইসলাম মাহবুব বলেন, কাউনিয়া খালের দুই পারের শতাধিক বাসিন্দা নিয়ে যৌথভাবে আমরা দীর্ঘদিন ধরে মাছ চাষ করে আসছি। বৃহস্পতিবার মাছ বিক্রির জন্য সকাল থেকে গ্রামবাসী মিলে আমরা মাছ ধরছিলাম। ওই সময় যুবদলের সাবেক নেতা মোমেন আকন ২৫-৩০ জনের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে আমাদের মাছ লুট করতে আসে। মাছ লুটের সময় সে জনতার হামলায় আহত হয়।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ মনিরুজ্জামান বলেন, আহত রোগীর শরীরের দুই পা, দুই হাত, চোখ উড়–সহ শরীরে বিভিন্ন জায়গায় দাঁড়ালো অস্ত্রের অন্তত ১৫-২০টি কোপের চিহ্ন রয়েছে।
আমতলী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আমতলী উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নের কাউনিয়া গ্রামে কাউনিয়া জলমহলটি অবস্থিত। এই জলমহলটির আয়তন ২৫.৯১ একর। ২০১২ সালের ১৪ ফেব্রæয়ারি আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা ডানিডার সহায়তায় খালের দুই পারের ৬৮ জন গ্রামবাসী নিয়ে একটি মৎস্যজীবি সমিতি গঠন করেন। সমিতির সভাপতি হন স্থানীয় ফজলুর রহমান খলিফা। ওই সময় বরগুনার জেলা প্রশাসক ২০১২ সালের ১৩ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত ১০ বছরের জন্য খালটিতে মাছ চাষের জন্য গ্রামবাসীদের ইজারা দেন। ১০ বছর পর ডানিডা চলে যাওয়ার পরে এবং খালের ইজারার মেয়াদ না থাকায় খালটি সকলের জন্য উমুক্ত হয়ে যায়। ওই সময় ছাত্রলীগের সভাপতি মাহবুব খালটি তার দখলে নেন এবং প্রায় ১২ বছর ধরে ভোগ দখল করে আসছেন। মাহবুব ব্যাপরী এমন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, খালটি স্থানীয় গ্রামবাসীসহ সবাই মিলে আমরা মাছ চাষ করে ভোগ দখল করছি।
কাউনিয়া জলমহালটি অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে চাওড়ার বাসিন্দা বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে আমতলী উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ২০২৪ সালের ২২ এপ্রিল ছাত্রলীগ সভাপতি মাহবুবকে প্রধান আসামী করে ৯ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধিন অবস্থায় রয়েছে। মামলায় তিনি অবৈধ দখল এবং চাঁদাবাজির অভিযোগ আনেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ছাত্রলীগ সভাপতি মাহাবুব অবৈধভাবে খালটি দখলে নিয়ে ভোগ দখল করে আসছেন।
কাউনিয়া খালটির সাবেক সভাপতি ফজলুর রহমান খলিফা অভিযোগ করে বলেন, আমি কাউনিয়া জলমহাল মৎস্যজীবি সমিতির সভাপতি ছিলাম। মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আমরা কেউ খালটির ধারে কাছে যেতে পারি নাই।
আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু বলেন, সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। ওই বিষয়ে এখনো কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।