নিজেস্ব প্রতিবেদকঃ-
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় করা ধর্ষণ মামলায় হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হককে আগে বিভিন্ন সময় নারায়ণগঞ্জ আদালতে আনা হলেও সমর্থকের তেমন উপস্থিতি দেখা যেত না। কিন্তু বুধবার (২৪ নভেম্বর) ছিল ব্যতিক্রম। মামুনুল হককে নারায়ণগঞ্জ আদালতে আনা হয়েছে—এ খবরে সকাল থেকেই তার সমর্থকদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যায় আদালতপাড়ায়। আদালতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকলেও ভিড় করেন সমর্থকরা।
বুধবার মামুনুল হকের উপস্থিতিতে কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণার সাক্ষ্য নেন আদালত। দুপুর ১২টা ২০ মিনিট থেকে ২টা পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নাজমুল হক শ্যামলের আদালতে এ সাক্ষ্য নেওয়া হয়।
আদালতে তোলার সময় সমর্থকরা মামুনুল হককে উদ্দেশ্য করে সালাম দেন। একইসঙ্গে আদালত থেকে বের হওয়ার সময়ও আদালতের বারান্দায় অনেক সমর্থন এগিয়ে আসেন বুক মেলানোর জন্য। তবে এসময় পুলিশ তাদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। কাউকে কাউকে বলতে শোন যায় ‘হুজুর ভয় নেই, আমরা আছি আপনার সাথে’। অনেকে স্লোগান দেওয়ারও চেষ্টা করেন।
এসময় মামুনুল হক তার সমর্থকদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘তোমরা সত্যের পথে থাকো। সত্যের জয় হবে’। যাওয়ার সময় বারবার সমর্থকদের দিকে তাকাতে দেখা যায় হেফাজতের সাবেক এ নেতাকে।
আজ আদালতে বাদী ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পিপি রকিবুদ্দিন আহমেদ। তাকে সহযোগিতা করেন নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোহসীন মিয়া, সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট হাসান ফেরদৌস জুয়েলসহ কয়েকজন।
অপরদিকে আসামিপক্ষে ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-আইনবিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মো. জয়নুল আবেদীন মেসবাহ ও নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম ওমর ফারুক নয়ন।
এর আগে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যদিয়ে কাশিমপুর কারাগার থেকে নারায়ণগঞ্জের আদালতে আনা হয় মামুনুল হককে। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আবার কাশিমপুর কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক-সার্কেল) নাজমুল হাসান জানান, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থায় গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে মামুনুল হককে আদালতে হাজির করা হয়। ২টায় সাক্ষ্য শেষে ফের কাশিমপুর কারাগারে নেওয়া হয়েছে।
আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) রকিবুদ্দিন আহমেদ জানান, সাক্ষ্যগ্রহণের শুরুতে আদালত ঝর্নার মুখের হিজাব খুলতে বলেন। এসময় মামুনুল হক উপস্থিত সবার উদ্দেশ্যে বলেন, ‘শরিয়তের হুকুম, হিজাব খুলবে না ঝর্ণা।’ তবে ঝর্ণা একবার হিজাব খুলে বিচারককে মুখ দেখিয়ে ফের হিজাব দিয়ে মুখ ডেকে রাখেন। জেরা চলাকালীন ঝর্ণার দিকে বারবার তাকিয়েছেন মামুনুল হক।
গত ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়্যাল রিসোর্টে এক নারীর সঙ্গে অবস্থান করছিলেন মামুনুল হক। ওইসময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এসে মামুনুল হককে ঘেরাও করেন। পরে ওই রিসোর্টে স্থানীয় হেফাজতের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা এসে ব্যাপক ভাঙচুর করে মামুনুল হককে ছিনিয়ে নিয়ে যান।
এ ঘটনায় গাড়ি ভাঙচুর, মহাসড়কে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ, আওয়ামী লীগ কার্যালয়, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতার বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়। এক সাংবাদিককে পিটিয়ে আহত করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে দুটি ও সাংবাদিক বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। এর কিছুদিন পর স্থানীয়রা আরও তিনটি মামলা করেন। ছয়টি মামলার মধ্যে তিনটি মামলায় প্রধান আসামি মামুনুল হক।
গত ৩০ এপ্রিল বিয়ের প্রলোভনে দুই বছর ধরে ধর্ষণের অভিযোগ এনে হেফাজত নেতা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানায় মামলা করেন ওই নারী। তবে মামুনুল হক তাকে তার দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করে আসছেন।