
মাহমুদ আহসান হাবিব :
যেহেতু ধৈর্যের অভাবে সারা জীবনেও একটা পূর্ণ দৈর্ঘ্য বাংলা সিনেমা যার দেখা হয়নি, তার আবার গল্প বা গপ্পো বলার সময়টা কোথায়? তারপরও যদি একটা গল্প বলেই ফেলি নিশ্চয়ই তা পাঠ করার কৌতুহল জাগতেই পারে।
কথাগুলো জীবনের পাতা থেকে অনায়াসে বললেন বছর সেরা রিপোর্টার ও সাংবাদিক শ্রদ্ধেয় জনাব সাইদুর রহমান রিমন
এক রাজপুত্র হঠাত করেই মানবাধিকারের দীক্ষা নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করলেন। মানবাধিকার সংক্রান্ত বার্তা সর্বত্র পৌঁছাতে এক সেলুন দোকানের নাপিতকে ডেকে রাস্তায় নিয়ে তার কাধে হাত দিয়ে হাটতে থাকেন। ফলে সুযোগ পেয়ে নাপিত ভাইটিও পাল্টা হাত রাখলেন রাজপুত্রের কাধে। সে ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লো, বাহবা পেলো মানবাধিকার। কিন্তু মজা পেয়ে নাপিত ছেলেটি প্রতিদিনই রাজবাড়ীর সামনে অপেক্ষমান থাকে এবং রাজপুত্র বের হলেই তার কাধে হাত দিয়ে কিছুটা পথ হেটে নিজের সুখ দুঃখের কথা জানায়। কিছুদিন পর সেই রাজপুত্রই দুঃখভরা কষ্ট জড়ানো কন্ঠে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন, “মানবতার প্রবচন সারা রাজ্যে ছড়িয়ে দিতে নাপিতের ছেলের কাধে রেখেছিলাম হাত, আমার কাধেও তার হাত রাখার সুযোগ দিয়েছিলাম। আজ নাপিতের ছেলে আমার কাধ চাপতে চাপতে এতটাই নিচে নামিয়েছে যে, এখন মাটির ইঞ্চিখানিক উপরে আমার নাক ঠেকেছে।”
এবার বলি বাস্তবতার গল্প। আমি আগেই সবার কাছে মাফ চেয়ে নিয়ে বলছি, ‘নিজে কী হনু’ এমনটা প্রচারের জন্য এ কাহিনীর সূত্রপাত ঘটাচ্ছি না। বুদ্ধিমান লোক এখান থেকেও হয়তো অনেক কিছু আঁচ করতে পারবেন। প্রতিদিনই আমার কাছে বিভিন্ন স্থান থেকেই সাংবাদিক বন্ধুরা আসেন। তাদের কারো না কারো হাত ধরে নতুন পরিচয়ের সাংবাদিক বন্ধুরাও কেউ কেউ আসেন। প্রথমদিন তারা আমার অফিসে ঢুকেনই না। বলেন, এত বড় মাপের একজন রিপোর্টারের (আমি আজও নিজেকে ক্ষুদে একজন রিপোর্টার ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারি না) সামনে যাবার সাহসও আমার নেই। শুধু ভাইয়ের দরজাটা খোলা থাকলে আমি দূর থেকে একনজর দেখেই চলে যাবো। দ্বিতীয় দিন ভদ্রলোক আসেন আমার অফিসে ঢুকে সামনা সামনি বসে একটু দেখবেন বলে। এদিনও অনেক বলে কয়েও তার মুখ থেকে কোনো শব্দ শোনার সুযোগ হয় না। তৃতীয় দফায় তিনি এসে বলেন, ভাই আপনি অনুমতি দিলে মাঝেমধ্যে আপনার কাছে এসে কিছু শিখতে চাই। ৪র্থ দফায় তিনিই এসে আমাকে কিছু শেখানোর চেষ্টা করেন। ৫ম দফায় তিনি আসেন আমার কিছু ভুল ধরতে এবং বলেই ফেলেন যে, আপনার পথ চলায় অনেক ভুল আছে। আমি বিনয়ের সঙ্গেই জানতে চাই: কেমন ভুল? জবাবে বলেন, ‘যাকে তাকে যখন তখন আপনি সরল বিশ্বাসে বুকে জায়গা দেন, বিশ্বাস করে ফেলেন। এ ভুলই আপনাকে একদিন ধ্বংস করে দিবে।’ আমি আর পাল্টা বলতে পারি না যে, আপনাকেও তো কোনো কারণ ছাড়াই আমি বিশ্বাস করেছিলাম, এ বিশ্বাসের কারণে তো আমার ঘর পর্যন্ত পৌঁছতে পেরেছেন আপনিও। আমার কাধে হাত রাখারও সুযোগ লুফে নিয়েছেন, আমাকে জ্ঞ্যানদানের বেপরোয়া সাহসও জন্মেছে আপনার। কিন্তু তা বলতে না পেরে আমি হাসি এবং হাসতেই থাকি….
এসব কেবলই হিংসা…প্রতিহিংসা
ইদানিং আবার একটি চক্র মাথাচারা দিয়ে উঠছে। সব চক্রেরই টার্গেট কিন্তু অন্য কিছু নয়, শুধুই সাঈদুর রহমান রিমন নামক প্রাণীটির সাংবাদিকতাই টার্গেট। তিনি কেন সব বিষয়ে নাক গলান, সব কথা তার কেন লিখতে হবে, তিনি কেন জনপ্রিয়তা পাবেন, তার কেন এতো ভালবাসার মানুষ থাকবে? কেবলই হিংসা, প্রতিহিংসা। এটার বিচার তো সৃষ্টিকর্তা নিজেই করবেন। এখান একটা বিষয় মনে রাখা দরকার যে, রিপোর্টার কখনই জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেন না। কারণ, আজ কোনো জনগোষ্ঠীর পক্ষে তার লেখা ছাপা হলে কালই অন্য লেখায় তাদেরকে আঘাত করা হয়ে যায়। ফলে কচুর পাতার পানির মতোই প্রিয়তা জোটে রিপোর্টারদের, আজ আছে তো কালই নেই। কিন্তু অলৌকিক সৌভাগ্যক্রমে বছরের পর বছর যাবত বিশাল এক পাঠক গোষ্ঠীর মিনিমাম আস্থা, বিশ্বাস ও ভালবাসা আমার পক্ষেই রয়েছে। ফেসবুকে সংযুক্ত করা প্রতিটি নিউজ ও তার প্রেক্ষিতে পাঠক সমাজের মতামত সে সাক্ষরই বহন করে বৈ কি।
এসব ঘিরই আমার বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা পরায়নতা তো নতুন নয়। সেই ১৯৯৮ সালে যখন আমি বছরের সেরা রিপোর্টার হিসেবে পুরস্কৃত হই তখন থেকেই। সেই আমলে রিপোর্টার্স ইউনিটি সারা বছরে মাত্র একজন রিপোর্টারকে পুরস্কৃত করতো, তখনই পর পর দুই বছরই সেরা রিপোর্টারের মর্যাদা দিয়েছেন সৃষ্টিকর্তা। অতএব কে বা কারা প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে বেজায় ক্ষিপ্ত হলেন, আমার রিপোর্টে আঘাতপ্রাপ্ত কয়জন এমপি মিলেমিশে সংঘবদ্ধ হলেন সেসব ফিরে দেখার সময়ও আমার নেই। তাদের সঙ্গে বাদানুবাদ কিংবা লড়াই করবো, নিজে বাঁচার পরিকল্পনা করতে সময় নষ্ট করবো…তাহলে সাংবাদিকতা করবো কখন? আমি যে এসব পাত্তাও দেই না তার প্রমাণ অসংখ্য। সাম্প্রতিক একটা বিষয় ভেবে দেখুন তো। আমি মেজর সিনহার বিষয় নিয়ে যখন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি করলাম তখন মূলধারার বেশিরভাগ সাংবাদিক আমার বিপক্ষে অবস্থান নিলো। এমনকি আমার নিজের পত্রিকা বাংলাদেশ প্রতিদিনও নানা কারণেই নিরব থাকতে বাধ্য হলো। কিন্তু আমি কী থেমে গিয়েছিলাম? না, মোটেও থামিনি। বরং ধারাবাহিক ভাবেই একের পর এক প্রতিবেদন তৈরি করে তা ফেসবুক পাতায় প্রকাশ করেই দেশজুড়ে ঝড় তুলেছিলাম। শুধু কমেন্ট আর শেয়ার করে হাতে গোণা কয়েকজন মানুষ আমাকে সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা করেছে, এগিয়ে যাওয়ার সাহস যুগিয়েছে। পরবর্তী ফলাফল সবারই জানা।
“সত্য আর ন্যায্যের পথে যদি একাও থাকো তবু লড়েই যাও…সফলতা তোমার জন্যই অপেক্ষা করছে” জন্মদাতা পিতার এ বাণীর পথ ধরে আজ অব্দি ব্যর্থ তো হইনি।
আরেকটি গপ্পো
একটি গল্প দিয়ে শুরু করেছিলাম আর শেষ করতে চাই আরেকটি গপ্পো দিয়ে। চৌধুরী সাহেব বাজারের দিকে যাওয়ার সময় রাস্তার কোনো জঞ্জালে পা বেধে হুমরি খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়তেই বিশাল আকারের এক দৈত্য এসে হাজির। কুর্ণিশ করে বলছেন, জ্বী মালিক, আদেশ করুন এ গোলামকে। চৌধুরীর চোখ তো ছানাবড়া। আমি কিসের মালিক? আপনিই বা গোলাম হতে যাবেন কেন? দৈত্য জবাবে বলছেন, আপনি যে দুট পাথরে হোচট খেয়ে পড়ে গেছেন তখনই দুই পাথরে ঘষা লেগেছে ফলে আমি হাজির তে বাধ্য হয়েছি। এই পাখর যার কাছে থাকবে আমি তারই গোলাম। চৌধুরী পাথর দু’খানা পায়ের কাছ থেকে তুলে পরম যতেœ হাতে নিয়ে বললেন, এবার বলুন তো দৈত্য বাবাজী আপনি কী কী করতে পারবে