ঢাকা জেলা প্রতিনিধিঃ-
কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা দানবীর রণদা প্রসাদ সাহার ১২৫তম জন্মজয়ন্তী উদযাপন করা হয়েছে। একই অনুষ্ঠানে কুমুদিনী ট্রাস্টের ৯০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীও উদযাপন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে শুক্রবার (১৯ই নভেম্বর) দিনব্যাপী কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্টের উদ্যোগে টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুরে কুমুদিনী কমপ্লেক্সে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের মূল আয়োজন শুরু হওয়ার আগে বিকেল থেকেই কুমুদিনীতে আমন্ত্রিত অতিথিদের আগমন ঘটে। কুমুদিনীতে আগমনের পর প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানে আগত সকল অতিথিদের উত্তরীয় পরিয়ে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়। এদিন দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ভিআইপি ও গুণী ব্যক্তিত্বের অধিকারী প্রায় তিন শতাধিক অতিথি উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে দেশ বরেণ্য কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধের সংগঠক, বুদ্ধিজীবী, মানবাধিকারকর্মী, সাংস্কৃতিক অঙ্গন ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা ছাড়াও বিভিন্ন পেশাজীবী এবং বিদেশি অতিথের মধ্যে ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দূতাবাসের প্রতিনিধিগণ রয়েছেন। সন্ধ্যা ৬টায় ভারতেশ্বরী হোমসের মাঠে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্ট্রের ওপর নির্মিত বিশেষ প্রমাণ্যচিত্র বড় পর্দায় প্রদর্শিত হয়। এরপর ভারতেশ্বরী হোমসের ছাত্রীরা মনোমুগ্ধকর শারীরিক কসরত প্রদর্শন করেন। দৃষ্টিনন্দন এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা ছাড়াও তুলে ধরা হয় বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসকারী ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নৃত্য ও দেশীয় সংস্কৃতি। এছাড়াও রণদার স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এসময় হোমসের ছাত্রী, কুমুদিনী নার্সিং ও মেডিকেল কলেজের ছাত্রী এবং শিক্ষক-শিক্ষিকা আর উপস্থিত দর্শকদের অংশগ্রহণে প্রায় সহস্রাধিক মোমবাতি হাতে প্রদীপ প্রজ্বলন করা হয়। অতিথিদের উদ্দেশ্যে স্বাগত বক্তব্য দেন কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজীব প্রসাদ সাহা। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মানণীয় তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান, রোকেয়া পদকপ্রাপ্ত আরমা দত্ত এমপি, সিমিন হোসেন রিমি এমপি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারে সাবেক উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, জাপান দূতাবাসের উপ-প্রধান ইয়ামায়া হিরোইয়োকি, ঢাকায় নিযুক্ত মালদ্বীপের হাইকমিশনার শিরুজিমাথ সামির, অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত, একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাষা সৈনিক প্রতিভা মুৎসুদ্দি, কুমুদিনী ট্রাস্টের পরিচালক শ্রীমতি সাহা, টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. আতাউল গনি, মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জোবায়ের হোসেন প্রমুখ। উল্লেখ্য, ১৮৯৬ সালের ১৫ নভেম্বর উর্থান একাদশীতে অতিদরিদ্র পরিবারে কালজয়ী এই মানব হিতৈষীর জন্ম। তাঁর মায়ের নাম কুমুদিনী দেবী এবং বাবার নাম দেবেন্দ্র নাথ সাহা। শিশুকালেই পিতা-মাতাকে হারিয়ে বড় হতে থাকেন তিনি। কঠিন অধ্যাবসায় আর অদম্য সাহসিকতা নিয়ে এগিয়ে যান। জীবন সংগ্রামে জয়ী এই রণদা প্রসাদ সাহা জীবনের সমস্ত উপার্জিত অর্থ মানবতার কল্যাণে দান করে কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনী তাদের এ দেশীয় দোসরদের সহায়তায় রণদা প্রসাদ সাহা ও ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহা রবিকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তাদের আর কোনো সন্ধান মেলেনি। নারী শিক্ষার জাগরণে বিশেষ ভূমিকা পালনকারী ও মানবসেবায় নিজের সর্বস্ব দান করায় এই মহাপুরুষ দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা সবার কাছে আরপি সাহা নামেই সমধিক পরিচিত।