বাগমারা প্রতিনিধিঃ
রাজশাহীর বাগমারার গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের রামরামা আরঙ্গবাদ হিন্দু পাড়ার বাসিন্দা শ্রী যুগোল চন্দ্র মন্ডলের ১৩ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে বাসুপাড়া ইউনিয়নের কামনগর গ্রামের প্রতারক নজরুলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বাসুপাড়া ইউনিয়নের কামনগর গ্রামের জনৈক নজরুল ইসলামের সাথে যৌথ ভাবে পুকুরে মাছ চাষের জন্য তার নিকট আত্মীয় গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের রামরামা আরঙ্গবাদ গ্রামের যুগোল চন্দ্র মন্ডল ও একই গ্রামের ফজলুর রহমান যৌথভাবে সমান অংশের ভিত্তিতে দুইটি পুকুরে মৎস্য চাষের জন্য লিখিত ভাবে চুক্তিবদ্ধ হয়। চুক্তিবদ্ধ হওয়া পর থেকে তিনজনে পুকুরে মৎস্য চাষ শুরু করে। মৎস চাষ শুরুর ১বছর পরে হিসাব নিকাশে মতভেদ দেখা দেয়। এক পর্যায়ে অংশীদার নজরুল ইসলাম প্রস্তাব দেয় যে, যেহেতু হিসাব নিকাশে সমস্যা হচ্ছে এবং আপনাদের বাড়ি দূরে হওয়ায় আপনাদের দুই জনের অংশ আমার নিকট বিক্রয় করে দেন। তার প্রস্তাবে যুগোল ও ফজলুর রহমান রাজি হয়ে হিসাব নিকাশ শেষে দুই অংশ মিলে ১৩ লক্ষ৬৫ হাজার টাকা পাওনাদার হয়। সে উক্ত টাকা ১ মাসের মধ্যে পরিশোধ করবে বলে স্টাম্পে লিখিত ভাবে নজরুল ইসলাম অঙ্গিকার নামায় স্বাক্ষর করে। চুক্তি মোতাবেক আমাদের পাওনা টাকা একমাস পার হলেও সে চুক্তি মোতাবেক টাকা পরিশোধ না করে বিভিন্ন রকম প্রতারনার আশ্রয় নেয় এবং বিভিন্ন রকম ভয়-ভীতি, হুমকি প্রদান করে। পুকুর হতে আমাদের বাড়ি প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে হওয়ায় এবং প্রতারক নজরুলের বাড়ির নিকটে পুকুর হওয়ার কারনে সে আমাদের অর্থ আত্মসাতের জন্য প্রতারনা করে। পরে আমরা নিরুপায় হয়ে, প্রাপ্ত অর্থ আদায়ের জন্য বাগমারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর ১১-০৭-২০২১ ইং তারিখে নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধ একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার অভিযোগটি আমলে নিয়ে বিবাদী নজরুল ইসলামকে সুষ্ঠু মীমাংসা ও আমাদের টাকা প্রদানের জন্য পর পর তিন বার নোটিশ প্রদান করা হলেও বিবাদী নজরুল বিভিন্ন রকম টালবাহানা শুরু করে। এর প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য ওসি বাগমারা কে নির্দেশ প্রদানন করেন। ওসি বাগমারা মোস্তাক আহমেদ নির্দেশ পাওয়াার পর একজন এস.আই কে তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেন। এস.আই দায়িত্ব পাওয়ার পর উভয় পক্ষকে বিষয়টি মীমাংসা জন্য থানায় দিন ধার্য করেন। ধার্য তারিখে বাদী থানায় ঠিক সময় হাজির হলেও বিবাদী নজরুল কে বাগমারা থানা পুলিশ হাজির করতে ব্যর্থ হন। এক পর্যায়ে ওসি মোস্তাক আহমেদ নিজেই বিরোধ পূর্ণ পুকুরে ও বিবাদী নজরুল ইসলামের বাড়িতে যান। তখন বিবাদী নজরুল ইসলাম ওসি কে বলেন, আমি চুক্তি মোতাবেক টাকা পরিশোধ করতে পারিনি আমরা আবার তিনজনে যৌথ ভাবে পুকুরে মাছ চাষ শুরু করি। সেই মোতাবেক ওসি মোস্তাক আহমেদ অংশীদার যুগোল চন্দ্র মন্ডল ও ফজলুর রহমান কে পুকুরে মাছ চাষের জন্য যেতে পরামর্শ দেন। ওসির পরামর্শ মোতাবেক তারা দুই জন যুগোল চন্দ্র মন্ডল ও ফজলুর রহমান পুকুরে যায় এবং নজরুল ইসলাম কে পুকুর পাড়ে তারা আসতে বলে। কিন্তু নজরুল ইসলাম পুকুর পাড়ে না এসে বাড়ি নাই বলে খবর পাঠান। এক পর্যায়ে আমরা নিরুপায় হয়ে আমাদের দুই জনার চুক্তি মোতাবেক অংশ গনিপুর ইউনিয়নের পোড়াকয়া গ্রামের এসএম এনামুল হকের নিকট ওই প্রাপ্ত টাকায় আমাদের চুক্তি মোতাবেক লিজ প্রদান করি। লিজ প্রদানের পরে লিজ গ্রহনকারী এসএম এনামুল হক কে সাথে নিয়ে গত ২০ আগস্ট শুক্রবার সকাল ১০ ঘটিকার সময় স্থানীয় সাধারণ জনগনের সামনে আমরা জাল নামিয়ে কি পরিমাণ মাছ আছে? কি-নাই? তা দেখার জন্য বেড় জাল নামিয়ে মাছ দেখা হয়। মাছ দেখার পর সম্পূর্ণ মাছ ছেড়ে দিই এবং অপর অংশীদার নজরুল ইসলাম কে জানিয়ে দিয়ে আসি যে আমরা আমাদের অংশ চুক্তি মোতাবেক এসএম এনামুল হক এর নিকট চুক্তি মোতাবেক হস্তান্তর করে আসি। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতারক নজরুল ইসলাম সমুদয় টাকা আত্মসাতের জন্য বিভিন্ন রকম অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে। এব্যপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন আমরা অভিযোগ পেয়েছি। তাকে বেশ কয়েক বার নোটিশ করা হলেও সে হাজির হয়নি। পরে অভিযোগ টি বাগমারা থানায় তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়। এ প্রসঙ্গে বাগমারা থানার অফিসার ইনচার্জ মোস্তাক আহমেদ বলেন, সর্বহারারা পুকুর দখল করেছে এমন ভিত্তিহীন ঘটনার প্রতিবাদ করে তিনি বলেন, বাগমারায় কোন সর্বহারা বা জঙ্গি নেই। পুকুরের অংশীদাররাই পুকুরে জাল নামিয়ে মাছ দেখার কথা শুনেছি। উক্ত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অনিল কুমার সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, পুকুরের একজন অংশীদার সংখ্যালঘু হিন্দু হওয়ায় তাদের টাকা আত্মসাতের জন্যই প্রতারক নজরুল বিভিন্ন ধরণের ছল-চাতুরী চালিয়ে যাচ্ছেন। পাওনাদারদের ন্যায্য টাকা আদায়ের ব্যাপারে বাগমারা থানায় তাদের লিখিত অভিযোগে সুপারিশ করেছিলাম। কিন্তু অদ্যাবধি সুষ্ঠু মীমাংসা না হয়ে উল্টো প্রতারক নজরুল ইসলাম টাকা আত্মসাতের জন্য নানান রকম চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া জরুরী হয়ে পড়েছে।