বরগুনা প্রতিনিধি:
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পর প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে বরগুনায় শুরু হয়েছে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগের ঘটনা। পাশাপাশি, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর ব্যাপকভাবে শুরু হয়েছে হামলা ও নির্যাতন। এসব কাণ্ডে অভিযোগের আঙুল উঠেছে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
সোমবার (৫ আগস্ট) শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর প্রচারিত হওয়ার পরপরই শত শত মানুষ মিছিল নিয়ে বরগুনার সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর উপজেলাস্থ অফিস কাম বাসভবন ও সদর রোডস্থ ল’ চেম্বারে হামলা ও লুটপাট চালায়। পরে বিকেলে আরেক দফা হামলা চালিয়ে বাসভবনটি আগুনে পুড়িয়ে ভস্মীভূত করে দেয় দুর্বৃত্তরা। পাশাপাশি, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবীরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়, সদ্য সাবেক স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম সরোয়ার টুকুর কার্যালয়, জেলা আওয়ামী লীগের সহ—সভাপতি হুমায়ূন কবীরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, আওয়ামী লীগ নেতা মশিউর রহমান শিহাবের বাসভবনসহ আওয়ামীপন্থী আইনজীবীদের ল’ চেম্বারে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়।
এ ছাড়াও বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সহ—সভাপতি মোতালেব মৃধার চরকলোনীস্থ বাস ভবনে প্রথমে গান পাউডার ছিটিয়ে এবং পরে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে আগুন ধরিয়ে দিলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ভাঙচুর ও তাণ্ডব চালানো হয় বরগুনা জেলার পোটকাখালীতে অবস্থিত সুরঞ্জনা ইকো ট্যুরিজম অ্যান্ড রিসোর্ট, বঙ্গবন্ধু নৌকা জাদুঘর, জেলা মুক্তিযোদ্ধা ট্রাস্টসহ বেশ কিছু স্থাপনায়। অন্যদিকে, বরগুনার সদর রোডের ইয়ামাহা মোটরবাইকের শো রুমে হামলা চালিয়ে ৩৫টি মোটরবাইক লুটে নিয়ে যায়। পরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা।
শুধু বরগুনা জেলা শহর নয়, আশপাশের বিভিন্ন এলাকা ও উপজেলাগুলোতেও ভাঙচুর ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। তালতলীর তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে সোমবার রাতে দুর্বৃত্তরা হামলা চালাতে গেলে সেখানে দায়িত্বরত নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মীরা প্রতিহত করেন।
এছাড়া বরগুনার বিভিন্ন এলাকায় বিরাজ করছে ডাকাত আতঙ্ক। স্থানীয়রা যার যার এলাকায় পালাক্রমে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন। এ বিষয়ে বরগুনার হাইস্কুল রোডের পিন্টু সিকদার বলেন, গত পরশু রাতে মসজিদের মাইকে ডাকাতির সম্ভাবনার কথা ঘোষণা দেয়ার পর আমরা দু’তিনশ মানুষ রাতজেগে পাহারা দিচ্ছি।
হামলা, ভাঙচুরের পাশাপাশি জমি দখলের অভিযোগও উঠেছে। বরগুনা শহরের ভাড়ানি খালের পশ্চিম ও পূর্বপাড়ে গভীর রাতে জমি দখল করে সীমানা নির্ধারণ করে সুতা টানিয়ে দেয় একদল দখলদার। পরে বুধবার (৭ আগস্ট) সকালে নৌবাহিনীর সহযোগিতায় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অবৈধ দখলদারদের সীমানা উচ্ছেদ করা হয়।
এ প্রসঙ্গে বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শামীম মিয়া বলেন, ‘যারা বিভিন্ন জায়গা দখল ও হামলা চালিয়েছে, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। সোমবার রাতে যারা ভাড়ানি খালের পাড়ে দখল নিয়েছিল সেগুলো আমরা উদ্ধার করেছি। এরপরও যদি কেউ দখল বা হামলার চেষ্টা করে তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জেলা প্রশাসক মোহা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যারা রাতের আঁধারে জায়গা—জমি দখল করবে এবং হামলা—লুট চালাবে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাধারণ জনগণের পাশে সব সময় জেলা প্রশাসন রয়েছে। কোথাও কোনও অরাজকতা সৃষ্টি করলে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য বলা হয়েছে।’