মাহমুদ আহসান হাবিব, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি \
দেশের উত্তরের কৃষি প্রধান জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে গম ও আমন ধানের লোকসানের পর এবার আগাম জাতের আলু চাষ করেও বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়েছে জেলার চাষিরা। মৌসুমের শুরুতে কিছুটা দাম মিললেও ডিসেম্বর মাষের শেষের দিকে দাম কমে যায়। এতে আলু চাষ করে বড় অংকের লোকসান গুনতে হচ্ছে চাষিদের। বর্তমানে বাজারে পুরোনো আলুর সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকায় নতুন আলুতে চাহিদা কম দেখাচ্ছেন ক্রেতারা। আর এ কারণেই ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে দাবি এলাকার চাষিদের।
এ অঞ্চলের লাভজনক ফসল হিসেবে আলু বেশ পরিচিত। জেলার বালিয়াডাঙ্গি, পীরগঞ্জ, রানীশংকৈল, হরিপুর ও সদর উপজেলার মাটি আলু চাষের উপযোগী হওয়ায় প্রতি বছর বেশি লাভের আশায় দুই ধাপে আলু চাষ করেন এ এলাকার চাষিরা। প্রথম ধাপের আলু চাষ শুরু হয় আশ্বিন মাসের প্রথম সপ্তাহেই। আগাম জাতের ধান কাটার অল্প সময় ব্যবধানেই আগাম জাতের আলু আবাদ করা হয় সেসব জমিতে।
জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এ বছর ২৭ হাজার ৫শ ৫৪ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। যার লক্ষ্য মাত্রা ছিল ২৮ হাজার ৫শ ১৫ হেক্টর। এর মধ্যে ঠাকুরগাঁও সদরে ১৪ হাজার ৫৩ হেক্টর, রাণীশংকৈলে ৩ হাজার ৯শ ৫০ হেক্টর, পীরগঞ্জ ৪ হাজার একশ ৫০, বালিয়াডাঙ্গি ২ হাজার ৭শ ১১ হেক্টর ও হরিপুরে ২হাজার ৬শ ৯০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আলু চাষ হয়েছে। ঠাকুরগাঁওয়ে, গ্যানুলা, ডায়মন্ড, রোমানা, স্টীক সহ আরও বেশ কয়েকটি জাতের আলু চাষ করে থাকে আলু চাষীরা। মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টিতে অনেক জমির আলু নষ্ট হলেও আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে বলে দাবি করছে কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতর।
সদর উপজেলার আলুচাষি বেলাল জানান, দুই একর জমিতে আলু চাষ করতে দুই লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এর মধ্যে আগাম জাতের এক একর জমির আলু বিক্রি করেছেন ৭০ হাজার টাকায়। দিন দিন আলুর দাম কমতে শুরু করেছে। শেষ পর্যন্ত পুঁজিটুকুও উঠবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
রাণীশংকৈল উপজেলার আব্দুল মালেক জানান, এবার পাচ একর জমিতে আলু চাষ করেছি। প্রতি একরে প্রায় দের লক্ষ্য টাকা খরচ হয়েছে। আশা করেছিলাম একর প্রতি দুই লাখ টাকার বেশি বিক্রি করতে পারব। এখন বাজারে আলু ১০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এই অবস্থায় একর প্রতি দাম লাগবে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। কোন কোন ক্ষেত্রে আমরা যা খরচ করেছি তার তিন ভাগের এক ভাগও আসবে না।
পীরগঞ্জ উপজেলার আলুচাষি মজিবর জানান, বাজারে এখনো পুরনো আলুর সরবরাহ পর্যাপ্ত রয়েছে। পুরনো আলুর দাম কম হওয়ায় ক্রেতারা পুরনো আলুর দিকেই বেশি ঝুঁকছেন। সে কারণে নতুন আলুর চাহিদা কমেছে বাজারগুলোতে। এ জন্য আলু চাষিদের লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে।
গতবারের ন্যায় এবারেও ভালো আলু উৎপাদন হওয়ায় দামের এমন নিম্নগতির কারন হিসেবে জেলার শাহী হিমাগারের আলু ব্যবসায়ী আব্দুর রফিক বলেন, গত বছর জেলায় অধিক আলু উৎপাদন হয়েছিল। যার কারনে আমরা ডিসেম্বর পর্যন্ত হিমাগেরর আলুটা বাজারে পেয়েছি। ফলে নতুন আলুর চাহিদার উপর প্রভাব পড়েছে। কারন নতুন আলুটা বেশিদিন সংরক্ষণ করে রাখা যায়না। যার কারনে আলুর চাহিদা কম আর দামটাও কম।
জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক আবু হোসেন বলেন, উৎপাদন ভালো হওয়ায় এই জেলার জন্য আলু একটি লাভজনক ফসল। যার ফলে অধিকাংশ চাষিরা এই ফসলের দিকে ঝুকে পরছে। আমরা চাইলেও এর বিকল্প হিসেবে অন্য কোন ফসলের কথা বলতে পারি না। এটা যেহেতু কাচামাল তাই এর দাম উঠা নামা করবে। আমরা আশাবাদী আলুর দাম কিছুটা বাড়লেই চাষিদের লোকসানের মুখ দেখতে হবে না।