নিজেস্ব প্রতিবেদকঃ-
নওগাঁয় পাট চাষে কয়েক বছর লোকসানের পর আবারও আগ্রহ বেড়েছে চাষিদের। বাজারে ভালো দাম থাকায় এ বছর ব্যাপক আগ্রহ নিয়ে পাট চাষ করেছে চাষিরা। পলিথিনের ব্যবহার কমিয়ে পাট ও পাটজাত দ্রব্যে ব্যবহার বাড়াতে ভোক্তাদের আগ্রহী করা হচ্ছে।
অপরদিকে পাট চাষে আগ্রহী করতে চাষিদের সরকার থেকে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহার বাড়ানো সম্ভব হলে পাটের আবাদ আরো বৃদ্ধি পাবে।
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও পাট উন্নয়ন অফিস কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে জেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমি। সেখানে দেশি, তোষা এবং মেস্তা জাতের ৫ হাজার ৭২৫ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে। যেখানে প্রায় ৭৭ হাজার ৩৬৫ বেল পাট (এক বেল: ১৮২.২৫ কেজি) উৎপাদিত হবে বলে আশাবাদী। কম পরিমাণ জমিতে চাষ হলেও গত বছর বাজারে ভালো দাম পেয়েছিল চাষিরা। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে জেলার পাটের আবাদ হয়েছিল- ৬ হাজর ১৫০ হেক্টর, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৬ হাজার ৯৩০ হেক্টর এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৮ হাজার ২৫ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করা হয়েছিল।
এদিকে উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর পাট ও পাট বীজ উৎপাদন এবং পাট সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় জেলার চারটি উপজেলায় ১০ হাজার ১৮০ জন পাট চাষিকে (প্রতিজনে ১২ কেজি সার, তিন কেজি টিএসপি, তিন কেজি পটাশ, ছয় কেজি ইউরিয়া এবং প্রতি বিঘায় এক কেজি বীজ) বীজ ও সার এবং ৪০০ জন পাট চাষিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। গত বছর প্রকার ভেদে প্রতি মণ পাট ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে। পাটের উৎপাদন, বহুমুখী পাটজাত পণ্যের উৎপাদন, ব্যবহার ও রফতানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছে পাট সংশ্লিষ্ট খাতগুলো। এছাড়া পরিবেশবান্ধব পাটজাত পণ্যের অভ্যন্তরীণ ব্যবহার বৃদ্ধিতে কাজ করছে সরকার।
জেলার মান্দা উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামের পাট চাষি মকবুল হোসেন বলেন, এ বছর চার বিঘা জমিতে উন্নত জাতের পাটের আবাদ করেছেন। গত বছর ২ হাজার ৫০০ টাকা মণ দরে পাট বিক্রি করেছিলেন। যা বিগত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ দাম বেশি পেয়েছেন। এক বিঘা জমিতে লাগানো থেকে শুরু করে সার, ওষুধ, শ্রমিক, পানি, কাটা, জাগ দেওয়া ও শুকানো পর্যন্ত প্রায় ৭-৮ হাজার টাকা খরচ হয়। আর সর্বোচ্চ ভালো ফলন হলে ১৪ মণ পর্যন্ত হয়ে থাকে।
বদলগাছী উপজেলার বালুভরা গ্রামের কৃষক জব্বার প্রামাণিক বলেন, তিনি এক বিঘা জমিতে এক টানা ৫ বছর পাটের চাষ করেছিলেন। মাঝখানে দাম না পাওয়ায় মাঝের এক বছর আর লাগাননি। তবে গত বছর পাটের দাম ভালো পাওয়ায় আবারও এ বছর পাট চাষে আগ্রহী হয়েছেন। সরকার থেকে পাট চাষে আগ্রহী করতে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সামশুল ওয়াদুদ বলেন, পাটের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে নিয়ে আসার লক্ষ্যে কৃষকদের পাট চাষে উদ্বুদ্ধ করতে প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া হয়েছে। চাষিরা পাটের ন্যায্য মূল্যও পাচ্ছে। অভ্যন্তরীণ মার্কেটে পাট থেকে তৈরি পাটজাত দ্রব্যের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাট থেকে শুধু ছালা, বস্তা ও চট এগুলোই তৈরি হয় না। পাট থেকে ১৩১ ধরনের পাটপণ্য উৎপাদন করা হয় এবং বিদেশে এই পণ্যগুলোর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, পলিথিন ব্যবহারের পরিবর্তে সর্বক্ষেত্রে পাটের ব্যবহার নিশ্চিত করতে কাজ করছে সরকার। এতে আমাদের পরিবেশ রক্ষা পাবে, পাশাপাশি পাটের হারানো ঐতিহ্য ও গৌরব ফিরে আসবে।