মাইনুল ইসলাম রাজু আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি।
অবশেষে দীর্ঘ ৫৪৪ দিন অপেক্ষার পালা শেষ করে আজ (রবিবার) শিক্ষার্থীরা ফিরছে তাদের প্রিয় শ্রেণিকক্ষে। সারাদেশের ন্যায় স্বাস্থ্যবিধি ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা মেনে খুলে দেওয়া হলো বরগুনার আমতলী উপজেলার প্রথম শ্রেণি থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। এ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আনন্দ আর উচ্ছ¡াসের মধ্যেদিয়ে প্রথম দিনে তাদের প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাশ করেছেন। গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পরে ও পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে সরকার দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে। এরপর দফায় দফায় সেই ছুটি বাড়ানো হয়। প্রথম দফায় চলতি বছরের ৩১ মার্চ ও পরে ২৩ মে দ্বিতীয় দফায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার উদ্যোগ নিলেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলে আসায় তা আর সম্ভব হয়নি। যদিও করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর পর বিগত বছরের এপ্রিল মাস থেকেই টেলিভিশনে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ক্লাশ প্রচার এবং শহরের স্কুল-কলেজগুলো ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনলাইনে ক্লাশ শুরু করে। কিন্তু গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারে ডিভাইস ও ইন্টারনেট সুবিধা না থাকায় সকল শিক্ষার্থীরা অনলাইন ক্লাশে যুক্ত হতে পারেনি। এতে ওই সকল শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় বড় ধরনের ঘাটতি তৈরি হয়। এ অবস্থায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পক্ষ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার জোর দাবি ওঠে। এরপর চলতি বছরের গত ৫ সেপ্টেম্বর আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে আজ (১২ সেপ্টেম্বর) থেকে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা দেওয়া হয়। উপজেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ২০৭টি সরকারী প্রাথমিক, এবতেদায়ী মাদ্রাসা ও কিন্ডার গার্ডেন স্কুলে ২৮ হাজার ৩০০ শিক্ষার্থী এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দাখিল- আলিম মাদ্রাসা ও কলেজে ২৯ হাজার ৩০৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। সরেজমিনে আজ উপজেলার বেশ কয়েকটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা ঘুরে দেখা গেছে, তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করিয়েছেন। বিদ্যালয়ে হাত ধৌত করার জন্য পর্যাপ্ত স্যানিজাইটার রেখেছেন, ১০০% মুখে মাস্ক নিশ্চিত করছেন, ৩ ফুটের বেঞ্চে ১ জন ও ৫ ফুটের বেঞ্চ ২ জন করে বসিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা কিভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিষ্ঠানে অবস্থান করবে এবং বাসা থেকে যাওয়া-আসা করবে সে বিষয়ে শিক্ষকরা শিক্ষণীয় ও উদ্বুদ্ধকরণ ব্রিফিং করেছেন। প্রথম দিনে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসগুলোতে উপস্থিতিও ছিলো মোটামুটি সন্তোষজনক। প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ইবতেদায়ী মাদ্রাগুলোতে ৮৫.৫% এবং কলেজ, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও দাখিল-আলিম মাদ্রাসায় ৭০% শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলো। এদিকে সকল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাপমাত্রা পরিমাপক যন্ত্র থাকলেও শহর ও গ্রামের মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসাগুলোতে তাপমাত্রা মাপার কোন যন্ত্র নেই। বরাদ্দ না থাকায় তারা তাপমাত্রা যন্ত্র কিনতে পারেনি বলে একাধিক মাধ্যমিক, কলেজ ও মাদ্রাসার প্রধানরা জানায়। এরমধ্যে আমতলী বন্দর মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ শিক্ষার্থীর তাপমাত্রা ৯৯% হওয়ায় তাদেরকে বাড়ীতে ফেরৎ পাঠানো হয়েছে বলে স্কুল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছেন। কথাহয় আমতলী বন্দর মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণীর ক্ষুদে শিক্ষার্থী আলফি ইসলাম, সানজিদার সাথে। তারা জানায়, আজ বিদ্যালয়ে আসতে ও আবার বন্ধুদের সাথে একত্রে বসে ক্লাশ করতে পেরে তারা মহাখুশি। আমতলী বন্দর মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ জাকির হোসেন খান বলেন, সরকারী ঘোষনা অনুযায়ী ১০০% স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিদ্যালয়ের প্রথম দিনের ক্লাশ পরিচালনা করেছি। তাপমাত্রা পরিমাপক যন্ত্রে বিদ্যালয়ের ৫ শিক্ষার্থীর তাপমাত্রা ৯৯% হওয়ায় তাদেরকে বাড়ীতে ফেরৎ পাঠিয়েছি। কুকুয়া আর্দশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ ফারুক হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন বিদ্যালয় বন্ধ থাকার পরে আজ শিক্ষার্থীদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। শিক্ষার্থীরা আনন্দ নিয়েই ক্লাশ করছেন। অপরদিকে উপজেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারদ্বয় উপজেলার বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ মজিবর রহমান মুঠোফোনে বলেন, উপজেলার বেশ কয়েকটি বিদ্যালয় পরিদর্শন করেছি। প্রতিটি বিদ্যালয় ১০০% স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রথম দিনের ক্লাশ নিয়েছেন। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ জিয়াউল হক মিলন বলেন, উপজেলার ৭৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও কলেজে মোট ২৯ হাজার ৩০৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৭০% শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়েছেন। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরকারের দেয়া নীতিমালা মেনেই তাদের শিক্ষা কার্যক্রম পুনঃরায় শুরু করেছে।