মাহমুদ আহসান হাবিব :
লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে লালমনিরহাট জেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলোয় পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। গত দুদিনে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে প্রবাহিত হলেও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে নদীর পানি বেড়ে ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে নদীর পাড়ে শুরু হয়েছে ভাঙন।
এর আগে গত বুধবার বিকালে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৩৭ সেন্টিমিটার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার), যা বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার নিচে ছিল।
বুধবার রাত থেকে ভারতের উজানের পানি আসায় তিস্তা নদীতে বাংলাদেশ অংশে প্রবাহ বেড়ে যায়। এতে নদীর দুকূল উপচে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। তিস্তা নদীর বাম তীরে লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। করোনাকালীন এ সময়ের বন্যায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন তারা।
একদিকে নদীর পানি বৃদ্ধি, অন্যদিকে নদী ভাঙনের কবলে পড়ে দিশেহারা জেলার সিন্দুনা, মহিষখোছা ও গোকুন্ডা ইউনিয়নের নদীপাড়ের শত শত মানুষ। ভাঙনের কবলে পড়ে অনেকে অন্যত্র সরে গেছেন। বিশেষ করে শেষ সম্বল আবাদি জমি, গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় সবকিছু হারিয়ে দিশেহারা মানুষ।
দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টের বন্যা পূর্বাভাষ কেন্দ্র জানায়, গত এক সপ্তাহ থেকে তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে পানি উঠানামা করছিল। দুদিন ধরে পানি কিছুটা কমলেও বৃহস্পতিবার থেকে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষজন চরম দুর্ভোগে পড়েছে। তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যারেজ রক্ষার্থে সবগুলো জলকপাট খুলে দিয়ে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করছে ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ। ফলে ব্যারেজের ভাটিতে নদী তীর বর্তি বেশ কিছু গ্রামে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ।
সিন্দুনা ইউনিয়নের চরাঞ্চলের মনছুর আলী, জয়নাল মিয়া তার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম বলেন, সন্ধ্যার পর থেকে হু হু করে ঘোলা পানি আসছে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পানি আরও বাড়তে পারে। অনেক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। করোনা, নদীভাঙন ও বন্যার পানিতে চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন বলে জানান তারা।
মহিষখোছা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আব্দুল মজিদ হোঁচট জানান, আমার ওয়ার্ডের প্রায় ৩ হাজার মানুষ পানিবন্দী। এ ছাড়া নদীভাঙনের কারণে অনেকে বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। অনেকের শেষ সম্বল আবাদি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এলাকার মানুষজন কোনো ত্রাণ চায় না। ভাঙনরোধে এলাকার মানুষজনের একটিই দাবি, সেটি হলো বাঁধ।
হাতীবান্ধা উপজেলার সিন্দুনা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল আমিন জানান, তিস্তার প্রবল ভাঙনে এ পর্যন্ত ৫০টি বাড়িঘর, আবাদি জমি প্রায় এক কিলোমিটার জায়গা নদীতে চলে গেছে। ভাঙনের কবলে রয়েছে চর চিলমারী গ্রাম। এ ছাড়া সেখানে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কমিউনিটি ক্লিনিক যে কোনো সময় নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে।
তিস্তা ব্যারাজের পানি পরিমাপ শাখার কর্মকর্তা নুর ইসলাম বলেন, ভারত থেকে প্রচণ্ড গতিতে পানি বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে। তিস্তা ব্যারাজের সব গেট খুলে দিয়ে পানির চাপ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আরও কী পরিমাণ পানি আসবে, তা ধারণা করা যাচ্ছে না।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। যেসব এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে, সেসব এলাকায় ভাঙনরোধে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে নদীপাড়ের মানুষের সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।