নীলফামারী প্রতিনিধি :
তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা এবং তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে দুই দিনের লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। আজ সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে রংপুরের কাউনিয়া, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা ও নীলফামারীর ডালিয়া ব্যারেজ এলাকায় এ কর্মসূচি শুরু হয়। উক্ত কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এতে অংশ নিয়েছেন উত্তরাঞ্চলের লাখো কৃষক, জেলে, পরিবেশবাদী কর্মী, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
তিস্তা নদীর পানির প্রবাহ বিঘ্নিত হওয়ায় উত্তরাঞ্চলের কৃষি, পরিবেশ ও জীবিকা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আন্দোলনকারীরা। তারা দ্রুত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং ভারতের সঙ্গে পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন।
তিস্তা নদী বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের অন্যতম প্রধান নদী। এ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা সরাসরি এই নদীর উপর নির্ভরশীল। তবে, শুষ্ক মৌসুমে ভারত তিস্তার উজানে গজলডোবা ব্যারেজে পানি আটকে রাখার ফলে নদী শুকিয়ে যায়। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন কৃষক ও জেলেরা।
রংপুরের এক কৃষক মাহমুদ আলী বলেন, “আমাদের প্রধান ফসল বোরো ধান। কিন্তু সেচের জন্য প্রয়োজনীয় পানি পাচ্ছি না। তিস্তার পানি না থাকায় চাষাবাদ কঠিন হয়ে পড়েছে। জমিগুলো ফেটে চৌচির হয়ে গেছে।”
তিস্তা নদী শুকিয়ে যাওয়ার কারণে নদী তীরবর্তী মানুষজনের জীবনও দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। শুষ্ক মৌসুমে পানি না থাকলেও বর্ষাকালে হঠাৎ পানি নেমে আসায় সৃষ্টি হয় ভয়াবহ বন্যা। এতে প্রতিবছর ফসল, ঘরবাড়ি এবং অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়।
স্থানীয় জেলে সাইফুল ইসলাম বলেন, “আগে তিস্তায় প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। এখন নদীতে পানি না থাকায় মাছও নেই। আমাদের জীবিকা বিপন্ন হয়ে পড়েছে।”
তিস্তার পানির সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ সরকার একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করলেও তা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। ২০২০ সালে ৮০০ কোটি ডলারের একটি প্রকল্পের প্রস্তাব করা হয়, যার আওতায় নদী খনন, বাঁধ নির্মাণ, সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ নানা পরিকল্পনা নেওয়া হয়। কিন্তু এখনো প্রকল্প বাস্তবায়নের কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।
অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া তিস্তা বাঁচাও আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ব্যারিস্টার হাসান রাজিব প্রধান বলেন, “আমরা বারবার সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি, কিন্তু কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। ভারত আমাদের ন্যায্য হিস্যা দিচ্ছে না, আর সরকার কার্যকর কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে না।”
অবস্থান কর্মসূচিতে আন্দোলনকারীরা চার দফা দাবি উত্থাপন করেছেন।
দাবিগুলো হচ্ছে
১. ভারতের সঙ্গে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি দ্রুত সম্পাদন করতে হবে।
2. তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
3. ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও জেলেদের জন্য ক্ষতিপূরণ ও বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
4. নদীভাঙন রোধে জরুরি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে।
আগামীকাল কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে আরও বৃহৎ গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ঐ সমাবেশে ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলে জানান আন্দোলনকারীরা। যদি সরকার দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে তারা আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।