লিখিত অভিযোগে বলা হয়, সাড়ে তিন বছর আগে প্রেমের সূত্রধরে ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল উপজেলার গড়কতগাঁও গ্রামের সমির উদ্দিনের ছেলে আমিনুর ইসলাম ডিজিএফআই-এ চাকরী করে এমন মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে একই উপজেলার বাঁশবাড়ি গ্রামের সফিকুর রহমান খানের মেয়ে সাফিনাকে ২০১৮ সালের ২৭ শে জুন বিয়ে করে। বিয়ের কিছুদিনের মাথায় স্ত্রী সাফিনা জানতে পারেন যে তার স্বামী অনেক আগে ২০০৭ সালে ডিজিএফআই-থেকে চাকুরীচ্যুত হয়েছেন। এছাড়াও আরো জানতে পারেন, তার স্বামী আগেও অন্য একটি মেয়েকে বিয়ে করেছেন এবং তাদের সংসারে সন্তানও রয়েছে।
লিখিত অভিযোগে আরও বলা হয়, স্ত্রী সাফিনা খানম তার বাড়ি থেকে আনা বাবার জীবীফান্ড থেকে বিয়ের উদ্দেশ্যে উত্তলনকৃত সাড়ে সাতলক্ষ টাকা ও ১০ ভরি স্বর্নালংকার বিক্রির সাড়ে সাত লক্ষ টাকা ঢাকার মিরপুরে রূপালী ব্যাংকের কর্পোরেট শাখায় রাখার কথা বলে প্রলোভন দেয় স্বামী আমিনুর। স্ত্রীও তার কথায় সায় দিয়ে রাজী হন এবং সমুদয় ১৫ লাক্ষ টাকা ব্যাংকে রাখার জন্য গেলে স্ত্রী সাফিনার একটি ব্যংক একাউন্ট খুলেন এবং সাথে সাথে আমিনুর নিজেরও একটি একাউন্ট খুলেন । কৌশলে সে টাকা স্ত্রী সাফিনার একাউন্টে না রেখে স্বামী আমিনুর তার নিজের একাউন্টে জমা দেন। সাফিনা বিষয়টি জানার পর এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে বিপত্তি বাঁধে। উপরন্ত আরো চাপ দেন যৌতুকের তিন লাক্ষ টাকা বাবার বাড়ি থেকে আনতে। এতে অস্বীকার করলে সাফিনার উপর নির্যাতনও নেমে আসে বলে প্রেসক্লাবে দেওয়া লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। নারী নির্যাতন ও যৌতুক দাবি করার অভিযোগ তুলে স্ত্রী সাফিনা ঠাকুরগাঁও জজকোর্টে পৃথক মামলা দায়ের করেন। এরপর আমিনুর সাফিনার সাথে দুরত্ব তৈরি করে পূর্বের তালাক প্রাপ্তা স্ত্রী কানিজ সেতারার(হীরা) সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং পুনরায় ২০২০ সালের ১২ অক্টোবরে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় । বিষয়টির সত্যতা পেয়ে স্বামী আমিনুরের বিরুদ্ধে সাফিনা খানম সালের ২৫ মে আরো একটি মামলা দায়ের করে। কিন্তু এরপরেও স্বামী আমিনুরের দৌরাত্ব কমেনি।
গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে ১২টার দিকে স্বামী আমিনুর মোটরসাইকেল যোগে ঠাকুরগাঁও শহর আসার পথে ভাতারমারী ইক্ষুখামার এলাকায় মো: হাবিব নামে অপর এক মোটরসাইকেল আরোহীর সাথে ধাক্কা খেয়ে গুরুত্বর আহত হন। ওই ঘটনায় প্রতিপক্ষ তার স্ত্রীকে ফাঁসাতে স্বামী আমিনুর ও তার পূর্বের তালাক প্রাপ্তা স্ত্রী কানিজ সেতারা(হীরা) নতুন ভাবে যোগসাজশ করে এবং স্বামী আমিনুর বাদি হয়ে শ্যালক ফজলে রাব্বি, স্ত্রী সাফিনসহ ৪ জনকে আসামী করে নগদটাকাসহ আশি হাজার টাকার ছিনতাই মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনা তদন্তে মাঠে নেমেছে পুলিশ।
ঠাকুরগাঁও থানার এসআই পীযুষ কুমার এই মামলার রহস্য উদঘাটনে তদন্তকাজ শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে স্থানীয় বাসিন্দা চায়ের দোকানদার, দুর্ঘটনায় অপর মোটর সাইকেল আরোহী হাবিবসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন জনের স্বাক্ষাতকার গ্রহণ করেছেন।
ভাতারমারী ইক্ষু খামার এলাকার চায়ের দোকানদার মো: করিম বলেন, সেদিন ঘটনাস্থলে দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটে। দিনদুপুরে ছিনতাই হলে সেটাও তারা দেখতে পেতেন বা শুনতে পেতেন বলে জানান তিনি।
এসব বিষয়ে অভিযুক্ত আমিনুর ইসলাম বলেন, সেদিন শ্যালক ও তার স্ত্রীসহ কয়েকজন তার মোটর সাইকেলের গতিরোধ করে ধারালো অস্ত্র দিয় কোপাতে থাকে এবং তার পকেটে থাকা নগদ ৪০ হাজার টাকাসহ স্বর্নের চেন ছিনতাই করে। গুরুতর অবস্থায় তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন এবং তার স্ত্রীর করা অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেন।
এব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই পীযুষ কুমার জানান আমরা গুরত্বের সাথে বিষয়টি তদন্ত করছি। তদন্ত শেষে সঠিক বিষয়টি উঠে আসবে বলে আশা করছি।