রাজশাহী প্রতিনিধি।।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নিদের্শনা অমান্য করে তফসিল ঘোষণার পরেও বাগমারায় ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ। আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কাউকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করা যাবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। সেই সাথে দলীয় প্রার্থীর হয়ে কোন এমপি বা মন্ত্রী প্রচারণা চালাতে পারবেন না বলেও জানানো হয়। যে কোন প্রার্থী স্বতঃস্ফূর্তভাবে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে পারে সে জন্য এই নির্দেশনা প্রদান করা হয়। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে গ্রহণ যোগ্য করার লক্ষ্যে এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উল্লেখ, ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী বাগমারা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ২১ এপ্রিল, মনোনয়নপত্র বাছাই ২৩ এপ্রিল, সেই সাথে কোন প্রার্থী মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে রিটার্নিং অফিসারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন ২৪-২৬ এপ্রিল, আপিল নিষ্পত্তি ২৭-২৯ এপ্রিল, প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৩০ এপ্রিল, প্রতীক বরাদ্দ ২ মে এবং ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ২১ মে। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে সোমবার রাতে উপজেলা আওয়ামী লীগের এক মিটিং এ আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেন তিনি এমপি আবুল কালাম আজাদ। প্রার্থী চূড়ান্ত করতে দলীয় কার্যালয় বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর কমপ্লেক্সে এক সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এই সিদ্ধান্ত নেন এমপি আবুল কালাম আজাদ। উক্ত সভায় শুধু চেয়ারম্যান পদে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাকিরুল ইসলাম সান্টুকে একক প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ঘোষণা করলেও ভাইস চেয়ারম্যান পদে কোন প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি। কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অমান্য করে এমপি আবুল কালাম আজাদের একক সিদ্ধান্ত ঘিরে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে। এদিকে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অমান্য করা যেন এমপি আবুল কালাম আজাদের নিয়মে পরিণত হয়েছে। এমপি হয়ে প্রথম মিটিং এ তিনি বলেছিলেন ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ওবায়দুল কাদের কি বললো সেটা বাগমারায় বাস্তবায়ন হবে না। আমি যেটা করবো সেটাই হবে। সব সময় নিয়ম মেনে সংগঠন চলে না। নিয়মের বাইরে একটা প্রয়োজনতন্ত্র আছে। সেই প্রয়োজনতন্ত্র মেনে বাগমারায় আওয়ামী লীগ পরিচালিত হবে। সংগঠন বিরোধী মনগড়া বক্তব্য প্রদান করায় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে তাকে কারণ দর্শনো নোটিশ দেয়া হয়েছে। এমপি আবুল কালাম আজাদের পক্ষ থেকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী চূড়ান্ত করার ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ভবানীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আব্দুল মালেক মন্ডল বলেন, আবুল কালাম আজাদ এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে প্রধানমন্ত্রীসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ কাউকেই মানেন না। এমপি কেন্দ্রীয় কোন সিদ্ধান্ত মেনে চলেন না। নিজের ইচ্ছা মতো যা খুশি তাই করে চলেছে। আওয়ামী লীগ করলে সংগঠনের নীতি মেনে চলতে হবে। আমরা কেউ সংগঠনের বাইরে না। নিজের খেয়াল খুশি মতো একক সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার নেই এমপি আবুল কালাম আজাদের। তিনি তাহেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি তো উপজেলা আওয়ামী লীগের হয়ে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ অনেক নেতৃবৃন্দ আছে। প্রার্থীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হলে উপজেলা আওয়ামীই নিবে। এমপি আবুল কালাম আজাদ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা আমরা মানি না। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ যেন আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে দ্রত একটা কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণ করে সে আহবান জানাচ্ছি। এ ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারওয়ার আবুলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, প্রার্থী নির্বাচন আমার একার সিদ্ধান্ত না। সংখ্যাগরিষ্টতার ভিত্তিতে জাকিরুল ইসলাম সান্টুকে একক প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় বাগমারা আসানের সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোনে সাড়া দেননি। এ ব্যাপারে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অনিল কুমার সরকার বলেন, এমপি হয়েই আবুল কালাম আজাদ আহামরি হয়ে গেছে। কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অমান্য করে কোন এমপি বা মন্ত্রী প্রার্থী ঘোষণা দিতে পারে না। কোন এমপির একক সিদ্ধান্ত দল চলতে পারে না। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত কোনো ভাবেই অমান্য করার সুযোগ নেই। আবুল কালাম আজাদ এমপির বিষয়ে কেন্দ্রের সাথে কথা বলবো কিভাবে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ঘোষণা দেয়।