বরগুনার আমতলীতে কৃষকদের পুনঃর্বাসন, প্রণোদনা, ফসল উৎপাদন এবং তদারকি বাড়ায় বর্তমানে চাহিদার অতিরিক্ত খাদ্যশস্য উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করছেন আমতলীর কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, সরকার উপকূলীয় অঞ্চলের লবণাক্ত জমিতে বহুমুখী ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যে কৃষি ভিত্তিক বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করে। ফলে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের খালে-বিলে, কৃষকদের বাড়ীর চালে ও মৎস্য ঘেরের বেড়িতে শোভা পাচ্ছে লাউ, ঢেঁড়স, করলা, মিষ্টি কুমড়া, বরবটি, শিম, ঝিঙে, পেঁপে, শসা, পুঁইশাক, লালশাকসহ নানা প্রকারের সবজি। এর সুফল পাচ্ছেন প্রান্তিক কৃষকেরা।
এছাড়া বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে মৌসুম ভিত্তিক প্রশিক্ষণ ও বিনামূল্যে সার ও বীজ প্রদান করে কৃষকদের প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে। ফলে রবি মৌসুমে গম, আলু, মিষ্টি আলু, সরিষা, ভুট্টা, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, ধনিয়া, মসুর, মুগ, খেসারি, মটর, মাষকলাই, তরমুজসহ শীতকালীন শাকসবজির উৎপাদন যা গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। এতে দীর্ঘদিন খাদ্য সংকটে থাকা কৃষকরা এখন নিজেরাই নিজেদের পুষ্টি ও খাদ্য উৎপাদন করছেন।
অপরদিকে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের কৃষকরা কৃষি বিপ্লব ঘটিয়েছেন। তারা তাদের এক ফসলি জমিকে এখন বহু ফসলি জমিতে রূপান্তরিত করেছেন। বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিপর্যয় কাটিয়েও উপজেলার কৃষকরা খাদ্যশস্য উৎপাদনে উল্লেখ যোগ্য সফলতা ও স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন প্রান্তিক কৃষকরা। গত ৫ বছরে উপজেলায় রেকর্ড পরিমাণ খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়েছে। দানা শস্যের পাশাপাশি শাকসবজি উৎপাদনেও রেকর্ড সৃষ্টি করেছে তারা। গত ৫ বছরে গড়ে সাড়ে ২০ হাজার টন শাকসবজি উৎপাদিত হয়েছে।
উপকূলীয় এলাকার কাছাকাছি উপজেলা হওয়ায় ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ¡াস, জলাবদ্ধতা, লবণাক্ততা, সেচের পানির দু®প্রাপ্যতাসহ বিভিন্ন সমস্যা কৃষি উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায়। ২০০৭ সালে সুপার সাইক্লোন সিডর ও ২০০৯ সালে আইলার ছোবলে উপকূলীয় এলাকায় কৃষি মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এরপরে আম্পান ও করোনা তার প্রভাব সামগ্রিক কৃষি খাতকে বিপর্যস্ত করে তোলে।
কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা মুঠোফোনে বলেন, দুই যুগ আগেও আমতলীসহ সমগ্র উপকূলীয় এলাকায় একটি বা দুটি ফসল ছাড়া বছরের অধিকাংশ সময় কৃষি জমি পতিত অবস্থায় পড়ে থাকত। এখন সেসব জমিতে তিন থেকে চারটি ফসল উৎপাদন হচ্ছে। আবার একই জমিতে মাল্টিলেয়ার পদ্ধতিতে একসঙ্গে একাধিক ফসলও চাষ হচ্ছে। এভাবে জমির বহুমুখী ব্যবহারে বদলে যাচ্ছে এ এলাকার কৃষকের ভাগ্য।
উপজেলা কৃষি অফিসার সিএম রেজাউল করিম মুঠোফোনে বলেন, এ অঞ্চলের কৃষকদের ভাগ্য উন্নয়নে আমাদের বৈজ্ঞানিকরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন করছেন। উদ্ভাবিত কার্যকরী প্রযুক্তিগুলো মাঠপর্যায়ে দ্রæত জনপ্রিয় করতে প্রকল্পের আওতায় কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের সার্বিক সহযোগিতা উচ্চফলনশীল জাতগুলোর উপযোগিতা যাচাইয়ের পর পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় আনা হচ্ছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপযোগী সবজি, ফল, ডাল, আলু, তৈলবীজ, গম, ভুট্টা, নারিকেলের উৎপাদন বাড়ানো ও কৃষকদের আয় বাড়ানোর পথ সহজ হবে।