কুষ্টিয়া প্রতিনিধিঃ
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে অন্তত ২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আপাতত খুলছে না। করোনা মহামারির কারণে টানা দেড় বছর বন্ধ রাখার পর সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও বন্যার পানি বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এসব প্রতিষ্ঠানের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদানের পথে। বন্যাকবলিত দৌলতপুর উপজেলার দুই ইউনিয়নের এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিবন্দি অবস্থা থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম আপাতত বন্ধই থাকছে। যা বন্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদের মন খারাপের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে প্রথম দিন রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) উপজেলার অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে ক্লাসে অংশ নিতে দেখা গেছে। তথ্য সূত্রে জানা যায়, দৌলতপুর উপজেলার বন্যাকবলিত রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী ইউনিয়নের অন্তত ২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিবন্দি থাকার কারণে রোববার (১২ সেপ্টেম্বর)খোলা যায়নি। পানি না সরে যাওয়া পর্যন্ত এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে যতদূর সম্ভব প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে রাখার নির্দেশনা দেয়া হলেও ক্লাস নেয়ার উপযোগী না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধই থাকছে। বন্যার পানি নেমে গেলে বন্ধ এই প্রতিষ্ঠানগুলোয় ক্লাস নেয়া শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। রোববার চিলমারী ইউনিয়নের খারিজাথাক মাধ্যমিক বিদ্যালয় খোলা হলেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল না। চিলমারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, জোতাশাহী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বাজুমারা মাদ্রাসা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে, রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ইনসাফনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, নবগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও রামকৃষ্ণপুর নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ও। এছাড়া চিলমারী ইউনিয়নে ১৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ১১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে বেশিরভাগই পানিবন্দি হয়ে পড়ায় সেগুলোও আপাতত বন্ধ রাখা হচ্ছে। যখন যে বিদ্যালয় থেকে পানি নেমে যাবে ঠিক তখনই সেই বিদ্যালয়ের ক্লাস গ্রহণ শুরু করা হবে। এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা জানান। চিলমারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ইকবাল হোসেন জানান, কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী রোববার তাদের স্কুল কোনোমতে খোলার ব্যবস্থা করা হলেও কোনো শিক্ষার্থী স্কুলে আসেনি। চারদিকে বন্যার পানি থাকায় যাতায়াত ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়ায় শিক্ষার্থীরা কেউ স্কুলে আসতে পারেনি। তবে অচিরেই বন্যার পানি সরে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সরদার মো. আবু সালেক জানান, চরাঞ্চলের বন্যাকবলিত দুই ইউনিয়নে একটি মাদ্রাসাসহ ৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আপাতত বন্ধ রাখা হচ্ছে। তবে প্রতিষ্ঠানগুলো যথাসম্ভব খুলে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য শিক্ষকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আশা করা যায়, আগামী ৮ থেকে ১০ দিনের মধ্যে বন্যার পানি সরে গেলে বন্ধ এসব প্রতিষ্ঠানে পুরোদমে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইদা সিদ্দিকা জানান, বন্যাকবলিত দুটি ইউনিয়নের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর শ্রেণিকক্ষ ও বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে বন্যার পানি না নামা পর্যন্ত পাঠদান কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না। তারপরেও যতদূর সম্ভব এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে উপজেলার অন্য বিদ্যালয়গুলো যথারীতি খুলে দেয়া হয়েছে। করোনার স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তার বলেন, বন্যাকবলিত এলাকার স্কুলগুলোর সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আমরা নিয়মিত খোঁজখবর নিচ্ছি। দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে দেখেছি, কিছু স্থানে ইতোমধ্যে পানি কমতে শুরু করেছে। আশা করছি, অচিরেই পানিবন্দি অবস্থায় থাকা স্কুলগুলোর পানি সরে যাবে। পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা কার্যক্রম চালুর ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রধান শিক্ষকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।