নিজস্ব প্রতিবেদক :
বঙ্গবন্ধুর খুনি খন্দকার মোশতাকের ছেলে খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ বাবুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। প্রতারণার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় মঙ্গলবার বিকালে কুমিল্লার আদালত থেকে ইশতিয়াকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
পলাতক থেকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা, জাল-জালিয়াতি করে পরিবারের সদস্যদের সম্পত্তি বিক্রিসহ নানা ধরনের প্রতারণার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
গত মঙ্গলবার বিকালে কুমিল্লার ৩নং আমলি আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. গোলাম মাহবুব খান ওই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। আদালত ইশতিয়াককে গ্রেফতার করতে দাউদকান্দি থানা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।
এলাকাবাসী জানান, খুনি মোশতাকের পিতা হযরত খন্দকার কবির উদ্দিন আহামেদ মৃত্যুকালে বিশাল সম্পত্তি রেখে গেছেন। পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুসারে কবির উদ্দিনের কিছু সম্পত্তি কল্যাণমূলক কাজের জন্য ট্রাস্টের নামে লিখে দেওয়া হয়। এ ছাড়া ওয়ারিশান সূত্রে বংশের সব সদস্য বাকি সম্পত্তির মালিক হলেও কবির উদ্দিনের সপ্তম সন্তান খুনি মোশতাকের একমাত্র ছেলে খন্দকার ইশতিয়াক আহম্মেদ বাবু বংশের সব সদস্যের সম্পত্তি বেদখল করে রেখেছেন। শুধু তাই নয়, খন্দকার কবির উদ্দিনের নামে ট্রাস্টের স্বঘোষিত চেয়ারম্যান হয়ে বাবু ওই স্টেটের কার্যালয়ে নিজের এবং স্ত্রী-সন্তানদের ছবি টানিয়ে রেখেছেন।
কিন্তু কবির উদ্দিনের অন্যসব ওয়ারিশকে ওই সম্পত্তি এবং বাড়িসহ মাজারে প্রবেশ করতে দেয় না ওই খুনির সন্তান বাবু। ট্রাস্ট এবং দাদার সম্পত্তি দখলে রাখতে মোশতাকপুত্র এলাকায় একটি বাহিনী গঠন করে রেখেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। কানাডায় বসে ওই বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করছেন তিনি। এরই মাঝে বেশ কিছু সম্পত্তি জাল দলিল এবং ভুয়া স্বাক্ষরে বিক্রয় করে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। সম্পতির ন্যায্য হিস্যা এবং স্টেটের উত্তরাধিকারীর অংশীদারিত্ব পেতে কবির উদ্দিনের ওয়ারিশ খন্দকার জাবির আহাম্মেদ সারোয়ার গত বছরের শেষের দিকে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। এতে মোশতাকপুত্র ইশতিয়াক, নাতি ইফতেখার আহমেদ শাদসহ অভিযুক্ত কেয়ারটেকার নিজামুদ্দিনকে আসামি করা হয়। এতে মোশতাকপুত্রের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
মামলার বাদী খন্দকার জাবির আহাম্মেদ সারোয়ার অভিযোগ করেন, খুনি মোশতাকের ছেলে খন্দকার ইশতিয়াক আমাদেরকে ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত করছেন। তিনি কানাডায় বসে দশপাড়া এলাকায় একটি সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করছেন। আমাদের ওয়ারিশদের স্বাক্ষর জাল করে বেশ কিছু সম্পত্তি বিক্রি করেছেন। এ ছাড়া আরও কিছু সম্পত্তি বিক্রির পাঁয়তারা করা হচ্ছে। তার নির্দেশে এসব জালিয়াতির কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন মোশতাকের বাড়ির কেয়ারটেকার নিজামুদ্দিন।
তিনি বলেন, কেয়ারটেকার নিজামুদ্দিনই মোশতাকপুত্রের সব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে থাকেন। কানাডায় বসে ওই কেয়ারটেকারের মাধ্যমেই বাহিনী নিয়ন্ত্রণসহ এলাকার আধিপত্য ধরে রেখেছেন মোশতাকপুত্র ইশতিয়াক।
কাজী রেহা কবির বলেন, খুনি মোশতাক আমার নানার পরিবারের সদস্য হলেও আমরা তাকে প্রাণভরে ঘৃণা করি। সবশেষ গত বছর মাকে নিয়ে হযরত খন্দকার কবির উদ্দিনের মাজার শরীফ জিয়ারত করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে মোশতাকপুত্রের কেয়ারটেকারের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা আমাকে সেখানে প্রবেশ করতে দেয়নি। ওয়ারিশান সূত্রে আমরা এই স্টেটের উত্তরাধিকারী হলেও আমাদের সেখানে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। গায়ের জোরে মোশতাকপুত্র স্টেটের চেয়ারম্যান বনে নিজের এবং স্ত্রী-সন্তানদের ছবি টানিয়ে রেখেছেন। এখন যেহেতু তার বিরুদ্ধে আদালতে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে, অবিলম্বে তাকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেফতার করে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি করেছেন রেহা কবির।
এ বিষয়ে দাউদকান্দি থানার ওসি নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা যতটুকু জানি মামলায় অভিযুক্ত আসামি খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ বাবু বিদেশে পলাতক আছেন। তার পরও গ্রেফতারি পরোয়ানার কপি হাতে পেলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।