সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি:
ইয়ার আলী। তিস্তা সোলার লিমিটেড নামক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে তিস্তা নদীর চরে ৬০০ একর জমি কিনে দিয়েছিলেন বেক্সিমকো পাওয়ার কোম্পানিকে। নিজের নামে কিনেছেন ৩৫ একর জমি। আর তাতে তিস্তা নদীর বুক থেকে বালু তুলে গড়ে তুলেছেন একটি থিম পার্ক। হয়েছেন ইয়ার আলী থেকে আলী বাবা। অভিযোগ উঠেছে আলাদিনের চেরাগ ঘঁষেই হয়ে গেছেন ইয়ার আলী থেকে আলীবাবা।কৃষকের জমি না কিনেই তা পার্কের মধ্যে ঘিরে নেওয়া এবং পার্কের দক্ষিণ-পূর্বপাশে মানচিত্রে থাকা রাস্তা বন্ধ করার অভিযোগ ও রয়েছে ইয়ার আলীর আলীবাবা থিম পার্কের বিরুদ্ধে।
জানা যায়, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের লাটশালা ও চর খোর্দায় তিস্তা নদীর বুকে জেগে ওঠা চরে ২০১৭ সালে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের জন্য জমি ক্রয় করে বেক্সিমকো পাওয়ার কোম্পানি। আর জমি কেনার মূল দায়িত্ব পালন করেন লালমনিরহাটের ইয়ার আলী নামের এক ব্যক্তি।জমি কিনতে ব্যবহার করেছেন তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন জমি পরিমাপকারী আমিনকে। প্রতি ২২ শতকে দোন হিসাবে জমি কেনা হয় ৪০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। কোম্পানিকে দেখানো দাম ও কেনা দামের মধ্যে যে উদ্বৃত্ত থাকে তা দিয়ে তিস্তা সোলার লিমিটেডের পশ্চিম পাশ ঘেঁষে ইয়ার আলী কেনেন ৩৫ একর জমি। আর তাতে কয়েকটি ড্রেজার মেশিন লাগিয়ে তিস্তার বুক থেকে বালু তুলে ভরাট করেন তিনি। গড়ে তোলেন আলী বাবা নামে একটি থিম পার্ক। ক্ষমতার দাপটে এতোদিন সব ঠিকঠাক চললেও রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সম্প্রতি বের হয়ে আসতে শুরু করেছে জোর করে তুলে নিয়ে জমি লিখে নেওয়া এবং না কিনেই অন্যের জমি জোর পূর্বক দখলে নেওয়ার অভিযোগ। স্থানীরা বলছেন, লাটশালা মৌজার একই খতিয়ানভুক্ত জমির বিভিন্ন অংশীদারের মধ্যে মৃত রহমান মোল্লার দুই মেয়ে রহিমা ও ময়মুনার নিকট নামমাত্র মূল্যে জমি নিলেও তাদের বড় চাচা বৃদ্ধ কৃষক মফিজ মোল্লার অংশ না কিনেই তা দখলে নিয়েছেন ইয়ার আলী।
অবশিষ্ট কোনো জমিজমা নেই, নেই কোনো বাড়িভিটাও জানিয়ে বৃদ্ধ মফিজ মোল্লা বলেন, আমার নিকট জমি কেনার কথা ছিল। আমাকে ইয়ার আলী বলেছিলেন, চাচা রাতে দলিল হবে না। কাল সকাল ১০ টার সময় হবে। এ কথা বলে রাত ১২টার সময় আমার দুই ভাতিজীকে নিয়ে গিয়ে দলিল করে নেয়। তারপর আমার জমিসহ ইয়ার আলী ঘিরা (কাঁটা তারের বেড়া) দিয়ে নেয়। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
বৃদ্ধের কথার সত্যতা পাওয়া গেল তার ভাতিজী ময়মুনার নিকট। ময়মুনা বলেন, রাতে বাদশা আমিন তার বাড়িতে আমার বোনকে তুলে নিয়ে এসে দুই বোনের কাছে টিপ নেয়। জমি নেয় ইয়ার আলী। আমাকে ৫ হাজার টাকা দেয়।
রাতে তুলে নিয়ে গিয়ে জমি লিখে নেওয়ার বিষয়ে বাদশা আমিনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায় তিনি ঠাকুরগাঁওয়ে থাকেন।
ফজিবর মোল্লা নামের অপর এক কৃষক বলেন, পার্কে নেওয়া জমি আমার বাপ-দাদার সম্পত্তি। আমার চাচার কাছ থেকে না কিনে তা চার আনা সম্পত্তির মালিকের কাছ থেকে কিনে নেয়। এটা নিয়ে ইয়ার আলীর সাথে মারামারিও হয়েছে। কিন্তু আমরা তার সাথে কুলাতে পারি নাই।
স্থানীয় চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম ৩-৪শ একর ও সাজ্জাদ মাস্টার দেড়শ একর এবং বাদবাকি কিছু জমি কিনে দিয়েছেন স্থানীয় অন্যরা জানিয়ে আলী বাবা পার্কের মালিক ইয়ার আলী বলেন, পার্কে আমার কোনো লাগে (টাকা) নাই, আর আমিও কিছু দেই নাই। বৃদ্ধ মফিজ মোল্লার দুই ভাতিজীর জমি কিনলেও মফিজ মোল্লার জমি না কিনেই দখলের বিষয়ে তিনি বলেন, তা পার্কের বাইরে আছে। এ নিয়ে মামলা চলছে।
সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য এমদাদুল হক বলেন, আমার বাড়ি কাছাকাছি হওয়ায় এ বিষয়ে জানা আছে। নদী ভাঙনের পর দূরদূরান্তে মানুষ চলে যায়। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে অংশীদার সনদ দেওয়া হয় অন্য অংশীদারদের বাদ রেখেই। এই সনদ দিয়েই জমি কিনে অন্য অংশীদারদের জমি দখলে নিয়েছেন ইয়ার আলী ও বেক্সিমকো পাওয়ার কোম্পানি। এমন দেড় থেকে দুইশ লোকের অভিযোগ এসেছে আমার কাছে। এর সমাধান হওয়া দরকার।
জানতে চাইলে তারাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, মফিজ মোল্লার জমি দখলের বিষয়টি জানা নেই। আর অংশীদার সনদ দেওয়ার বিষয়টি এলাকার মেম্বার আগে সুপারিশ করেছে। তারপর আমি স্বাক্ষর করেছি। তবে কেউ বাদ পড়লে তার অংশ তো আর বাদ যাবে না।