গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি।।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে নির্বাচনের মাধ্যমে তৃতীয় দলকে ক্ষমতায় আনতে আগামী ৭ জানুয়ারীর নির্বাচন বাতিলের দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের জবাব দেবে দেশবাসী। নির্বাচন বাতিলের জন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। অনেকে আন্তর্জাতিকভাবেও জড়িত। তারা বাংলাদেশে তৃতীয় পক্ষকে ক্ষমতায় আনার জন্য কাজ করছে। আমরা ৭ জানুয়ারীর নির্বাচনের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রের উপযুক্ত জবাব দেব।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কেউ যদি নাক গলাতে আসে আমরা সেটা মেনে নিবো না। বাংলাদেশ মেনে নেয়নি। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও পারেনি। মুক্তিযুদ্ধে আমরা বিজয় অর্জন করেছি। আর অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিজয় সেটাও আমরা ইনশাআল্লাহ অর্জন করে তাদের দেখিয়ে দেব যে আমরা পারি। দরিদ্রের হার আরো কমিয়ে বাংলাদেশকে আরো উচ্চ মর্যাদায় আমরা নিয়ে যাব ইনশাল্লাহ। ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ, সোনার বাংলা ও স্মার্ট বাংলাদেশ আমরা করে দেবো।
আজ শনিবার (৩০ ডিসেম্বর সকালে নিজ নির্বাচনী এলাকা টুঙ্গিপাড়া উপজেলার সরকারী শেখ মুজিবুর রহমান কলেজ ও দুপুরে কোটালীপাড়া উপজেলার শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ সরকারী কলেজ মাঠে দু’টি নির্বাচনী জনসভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, “আগামী ৭ জানুয়ারি আমাদের নির্বাচন। নৌকা মার্কায় আমরা ভোট করবো। আপনারা সকালে সকলে স্বশরীরে এসে ভোট দিয়ে এই বিশ্বকে দেখাবেন যে এই নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং আমরা তা করতে জানি ও করতে পারি। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন আমরা করতে পারি। আমরা চাই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হোক।
বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয় ওই বিএনপি-জামাত জোট মিলে অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছে। মানুষ হত্যা করেছে। রেল লাইনে মা-শিশুকে পুড়িয়ে মারে, রাস্তাঘাটে বাসে আগুন দিয়ে পোড়ায়। এই দুর্বৃত্ত পরায়ণতা এটা আমাদের বন্ধ করতে হবে। আগুন যারা দেয় বা যারা ক্ষতিগ্রস্ত করে, নির্বাচন বাঞ্চল করার ষড়যন্ত্র যারা করে ওদেরকে ধরিয়ে দিন, ওদের উপযুক্ত শাস্তি দিন। এটাই আমি সবার কাছে আহ্বান জানাবো। জনগণের অধিকার নির্বাচনের অধিকার, ভোটের অধিকার।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আরো বলেন, আমি সুযোগ পেয়েছি দেশের সেবা করার। আমার দায়িত্বতো আপনারাই নিয়েছেন। সেদিক থেকে আমি সৌভাগ্যবান। আমার নির্বাচন নিয়ে আমাকে চিন্তা করতে হয়না। জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান এদেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। কোন রাস্তাঘাট ছিলনা। ছিল দূর্গম এলাকা। মানুষের জীবন জীবিকার কোন সুযোগ ছিলনা। মানুষ দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত ছিল। তাদের ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া, শিক্ষা-দীক্ষার কোন সুযোগ ছিল না। সারা বাংলাদেশেই একই চিত্র। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এদেশের মানুষের কথা ভাবতেন। তিনি তার জীবনটা উৎসর্গ করেছেন, এদেশের মানুষের জন্য। শুধু তাই না, বাংলার মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য তিনি আজীবন সংগ্রম করেছেন। নিজের জীবনের কোন চাওয়া পাওয়া ছিল না। এই বাংলাদেশের তিনি শুধু স্বাধীনতাই দেননি, বাংলাদেশের জনগণের মুক্তির পথও তিনি দেখিয়ে দিয়ে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ অস্ত্র কাধে নিয়ে বিজয় অর্জন করেছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের দায়িত্বভার নিয়ে তিনি মাত্র তিন বছর সাত মাস সময় হাতে পেয়েছিলেন। এর মধ্যেই তিনি দেশকে স্বল্পন্নোত দেশে উন্নীত করেছিলেন। আমাদের দূর্ভাগ্য ৭৫’র ১৫’আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। একইসাথে হত্যা করা হয় আমার বাবা মা ভাইদের। শ্রদ্ধা জানাই ৩০ লক্ষ শহীদ ও দুই লক্ষ মা বোনদের। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে যারা জীবনউৎসর্গ করেছে দেশের জন্য তাদেরকেও আমি সংগ্রামী সালাম জানাই। তখন আমি আমি বিদেশে ছিলাম ।
নির্বাচন বানচাল করতে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র হচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তৃতীয় পক্ষ কী করতে পারে? দেশের কোনো উন্নতি করতে পারে না। ২০০৭-এ আপনারা দেখেছেন কী করেছে। তার আগে তো জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়া, এরাই তো ছিল, মানুষের তো কোনো ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি! মানুষ তো যে অন্ধকার-অন্ধকারেই ছিল। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ ছিনিমিনি খেলতে পারবে না। দেশের মানুষ নিরাপদ থাকুক। দেশের উন্নতি তরান্বিত হোক। আর তারা বারবার বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। বারবার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে কিন্তু এটা করেও তারা সফল হতে পারছে না।
উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ২০২৬ সালে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হবে জানিয়ে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই এই যাত্রা সফল করতে পারে। আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কেউ পারবে না। কারণ, বিএনপি-জামায়াতের সে যোগ্যতাই নাই। কারণ, বিএনপি হচ্ছে খুনিদের পার্টি আর জামায়াত হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের পার্টি।
বিদেশে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনীদের দেশে ফিরিয়ে এনে সাজা কার্যকর করা হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এখনো বিদেশে কয়েকজন রয়ে গেছে। নূর, রশিদ, ডালিম, মুসলেহ উদ্দিন, রাশেদ এখনো ফেরারি। তাদের আনার জন্য বিদেশের সঙ্গে আমরা আলোচনা চালাচ্ছি, আইনগতভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমি জানি না কেন আমেরিকা সেই খুনি রাশেদকে আশ্রয় দিয়ে রেখেছে। কানাডা নূরকে আশ্রয় দিয়ে রেখেছে। ডালিম আর রশিদ পাকিস্তান আর লিবিয়াতে যাতায়াত করে। তারপরও আমাদের প্রচেষ্টা আছে ওই খুনিদের ধরে এনে আমরা রায় কার্যকর করবো। জাতির পিতার হত্যাকারীদের রায় আমরা কার্যকর করব। ইতোমধ্যে কয়েকজনকে আমরা নিয়ে এসেছি। ওদের রায় আমরা কার্যকর করেছি।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, আমরা যখন বিদেশে ছিলাম, রিফিউজি হিসেবে থাকতে হয়েছিল। সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে জিয়াউর রহমান। সে চাইনি আমরা দেশে ফিরে আসি। এমনকি রেহানার পাসপোর্টের সময় শেষ হয়ে গিয়েছিল। তার পাসপোর্টও রিনিউ করে দেয়নি। তারা সবসময় বাঁধা দিয়েছিল আমরা যেন ফিরে না আসি। একবার চিন্তা করে দেখুন, বিদেশ বিভূয়ে আমরা দুই বোন নিজেদের নামটা পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারিনি। নিরাপত্তার স্বার্থে যে দেশে আমাদের আশ্রয় দিয়েছে সেখানে আমি কিভাবে থাকবো। আমাদের বাইরে কিছু ছিল না। আমাদের বাবা নেই, মা নেই, ভাই নেই-ছয়টা বছর সেখানে কাটাতে হয়। ৮১ সালে বাংলাদেশ আওযামী লীগের সম্মেলনে আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করে। আমার বাবার স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশকে নিয়ে। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুঁটিয়ে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করবেন। বাংলাদেশের মানুষকে উন্নত জীবন দিবেন। ছোট বেলা আমরা সেই গল্প শুনে বড় হয়েছি। যেদিন আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম দেশে ফিরে আসবো। আমি বাংলাদেশে ফিরে এসেছি এমন একটি দেশে যেখানে আমার বাবার খুনিরা যাদের বিচার হবেনা বলে ইনডেমিনিটি অধ্যাদেশ দেয়া হয়েছিল। তাদের বিচার না করে পুরস্কৃত করেছিল জিয়াউর রহমান। বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি, ব্যবসা এবং ক্ষমতাসীন করেছিল। অপরদিকে যুদ্ধাপরাধি ১৯৭১ সালে যারা সারা বাংলাদেশে গণহত্যা চালিয়েছে, মেয়েদের ধরে নিয়ে গিয়ে পাকিস্তানিদের ক্যাম্পে দিয়েছে। দিনের পর দিন তাদের উপর পাশবিক অত্যাচার চালানো হয়েছে। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে ছারখার করে দিয়েছে। লুটপাট করে নিয়েছে মানুষের সম্পদ। সেই সকল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার জাতির পিতা শুরু করেছিলেন। সেইবিচার বন্ধ করে দিয়ে জিয়াউর রহমান যারা জেলে ছিল তাদের মুক্তি দিয়ে এবং যারা পাসপোর্টে পাকিস্তানে চলে গিয়েছিল তাদেরকে ফিরিয়ে এনে এই বাংলাদেশে তাদের প্রতিষ্ঠিত করে, মন্ত্রি বানায়, প্রধানমন্ত্রী বানায়, উপদেষ্টা বানায় তারাই ক্ষমতায়। আমি যখন ফিরে আসি, আমার বিচার চাওয়ার কোন অধিকার ছিল না। বাবা মা ভাই সব হারিয়েছি। তাদের বিচার আমি চাইতে পারবো না সেরকম আইন করা হয়েছিল। আজকে যদি কারো একটা আত্মীয় মারা যায় তারা বিচার চায়। কিন্তু সেদিন সে অধিকার ছিল না ১৫ আগস্ট আমরা যারা আপনজন হারিয়েছিলাম তাদের বিচার চাওয়ার।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আরো বলেন, এই কোটালীপাড়ায় জনসভা করতে এসেছিলাম। সেদিন শেখ রেহানাও সাথে ছিল। ৭৬ কেজি ওজনের বোমা এখানে পুঁতে রাখা হয়েছিল। কথায় আছে, রাখে আল্লাহ মারে কে, মারে আল্লাহ রোখে কে। আমি হচ্ছি রাখে আল্লাহ মারে কে। একজন চায়ের দোকানদারের হাতে ধরা পড়লো সেই বোমা। এত নিরাপত্তা, এত পুলিশ থাকা সত্বেও, একজন চায়ের দোকানদার খুঁজে পেয়েছিল বলেই আমারা সেদিন বেঁচে গিয়েছিলাম। তারপরও আমি এসেছিলাম এখানে। রেহানা ও তার ছেলে মেয়েরা সাথে ছিল। বক্তৃতাতা দিয়ে চলে গিয়েছি। ৮৪ কেজি ওজনের যে বোমাটা হেলিপ্যাডের নীচে পোঁতা ছিল সেটা একদিন পরে পাওয়া য়ায়। আল্লাহই সেদিন আমাদের বাঁচিয়ে দিয়েছিল। আজও সে কথা মনে পড়ে। সেই চায়ের দোকানদারের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। সে যদি সেদিন বোমাটি খুঁজে না পেতো তাহলে কি হতো, ওই এলাকাটা কি হয়ে যেত। বারবার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি। কখনও গুলি, কখনও বোমা, কখনও গ্রেনেড হামলা। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা মানব ঢাল রচনা করে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে বার বার আমাকে রক্ষা করেছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়াবাসীর সমর্থনকে নিজের শক্তি হিসেবে উল্লেখ করে তাঁর দায়িত্ব নেওয়ার জন্য তাদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, আমি ৩’শ আসন দেখি। আর আমাকে দেখেন আপনারা। কাজেই এটাই হচ্ছে আমার সব থেকে বড় পাওয়া, আমার মত একজন সৌভাগ্যবান প্রার্থী বাংলাদেশে আর নেই। এটা হলো বাস্তবতা। তার কারণ আপনারা। আপনারাই আমার দায়িত্ব নেন। আপনারা আমাকে দায়মুক্ত করে রেখেছেন বলেই বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে আমরা কাজ করতে পারছি। বাবা মা ভাই সব হারিয়ে পেয়েছি আপনাদের। আপনাদের¯স্নেহ ও ভালবাসাই আমার চলার পথের পাথেও। আপনাদের ভোটে নির্বাচিত হয়েছি। ২১ বছর পর সরকার গঠন করেছি। ওই ইমডেমিনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে দিয়ে আমি সেই খুনিদের বিচার করেছি। আমাকে অনেকে বলেছিল এই বিচার করতে যাচ্ছ তোমাকে তো মেরে ফেলে দেবে। আমি জীবনের মায়া করি না। কিন্তু অন্যায়ের প্রতিবাদ করে যাব। বিচারহীনতার কালচার এদেশে চলতে পারে না। খুনি দোষীদের বিচার এই দেশে হবেই। সে বিচার করতে যেয়ে অনেক বাঁধা, সাক্ষী দেয়ার লোক পাওয়া যায়না। খালেদা জিয়া বাঁধা দিয়ে হরতাল ডাকে। যাতে জজ সাহেব কোর্টে যেতে না পারেন। রায় দিতে না পারেন। সে রায়ের দিনও হরতাল ডেকে ছিল। খুনিদেরকে খালেদাজিয়া যখন ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসে তখন সেই খুনিদের আবারও চাকরি দিয়ে পুনর্বাসন করে। তখন তারা সাঁজা পেয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আল্লাহর রহমতে ২০০৮ নির্বাচনে জয়ী হয়ে যখন সরকারে আসি সেই বিচারের রায় কার্যকর করি। আমি কোটালীপাড়াবাসী ও টুঙ্গিপাড়াবাসী সকলের কাছে কৃতজ্ঞ। আপনাদের কাছে আমার কৃতজ্ঞা জানাই। আপনারা বার বার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। আমি দেশ সেবার সুযোগ পেয়েছি। যার ফলে এইবিচার আমি করতে পেরিছি। পাশপাশি বাংলাদেশের মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা যে ব্যবস্থা যেটা জাতির জনকের স্বপ্ন ছিল আজকে আমরা তা অনেকটা পূরণ করতে পেরেছি।
আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা দিয়েছিলাম ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ব। আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। আজকে সারাদেশে ওয়ইফাই কারেকশন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপন করেছি। ব্রডব্যান্ড কানেকশন আমরা দিয়ে দিয়েছি। সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে আমরা ডিজিটাল সিস্টেম কানেকটেড করছি। আমাদের ছেলে মেয়েরা যাতে গড়ে ওঠে সেজন্য আমরা আধুনিক কম্পিউটার ল্যাব করে দিচ্ছি প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। কম্পিউটার ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। ছেলে মেয়ে সকলের জন্য আমরা কম্পিউটার ট্রেনিং দিয়ে দিচ্ছি। যাতে দেশে বিদেশে কাজ করে খেতে পারে। আজকে দেশে ৬ লাখের উপরে ফ্রীল্যান্সার রযেছে। বিনা পয়সায় বই দিচ্ছি। বাবা মার পয়সা দিয়ে বই কিনতে হয় না। সে দায়িত্ব আওয়ামী লীগ সরকার নিয়েছে। প্রাইমারি থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত আমরা বৃত্তি-উপবৃত্তি দিচ্ছি। তিন কোটি ৯৪ লাখ শিক্ষার্থী এই সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে। নারী শিক্ষা দ্বাদশ শ্রেনী পর্যন্ত অবৈতনিক করে দিয়েছি। নারীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা আমরা করেছি। প্রাইমারি শিক্ষায় ৬০ ভাগ যাতে নারী শিক্ষক হয় সে ব্যবস্থা আমরা করেছি। প্রাইমারি শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকদের চাকরির মান আমরা ইউন্নত করে দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাসপাতালে বোমা মেরে ফিলিস্তিনে নারী শিশুকে হত্যা করা হচ্ছে। রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স, কর্তব্যরত পুলিশ সদস্য ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়ে (এখানে বাংলাদেশে) একই কাজ করেছে তারেক জিয়া। বাংলাদেশে এ সমস্ত দুর্বৃত্তায়ন চলবে না। আল্লাহ যদি দিন দেয় আগামী নির্বাচনে জয়ী হয়ে আসতে পারলে-ওই লন্ডনে বসে হুকুম দেবে আর দেশের মানুষের ক্ষতি করবে, দেশের মানুষ মারবে সেটা হতে পারে না। দরকার হলে ওটাকে ওখান থেকে ধরে এনে শাস্তি দেওয়া হবে, ধরে এনে শাস্তি দেব।
প্রার্থী হিসাবে নৌকার ভোট চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি একজন প্রার্থী হিসেবে নৌকা মার্কায় ভোট চাই, ভোট দেবেন তো? তাঁর এই প্রশ্নের উত্তরে সমস্বরে চিৎকার করে জনতা দুই হাত তুলে ভোট প্রদানের সম্মতি জানায়। আমি জানি আপনারা দেবেন, প্রতিউত্তর দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
নতুন ও তুরুনদের ভোট চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আজকে আমাদের যুবসমাজ তরুণ সমাজ প্রথমবার যারা ভোটার হবে তাদের কাছে আহ্বান করব, প্রথমবার ভোট যেন ব্যর্থ না হয়। সারা বাংলাদেশের যারা প্রথমবার ভোটার হবে তাদের প্রতি আমার এই আহ্বান নতুন ভোটার নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে সরকার গঠন করার সুযোগ করে দিয়ে বাংলাদেশ যেভাবে উন্নয়নের দিকে যাচ্ছে সেই উন্নয়নের পথে বাংলাদেশকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সাহায্য করতে হবে। কারণ তারুণ্যের শক্তি বাংলাদেশের অগ্রগতি সেটাই আমরা বিশ্বাস করি। তরুণদের কর্মসংস্থান, তাদের ভোকেশনাল ট্রেনিং, কারিগরি শিক্ষা এবং প্রযুক্তি শিক্ষা, আধুনিক শিক্ষা দিয়ে দক্ষ, স্মার্ট তরুণ সমাজ আমরা গড়ে তুলবো। আমাদের সরকার, আমাদের অর্থনীতি, আমাদের সমাজ ব্যবস্থা স্মার্ট ব্যবস্থা হবে। এই বাংলাদেশ শিক্ষায়-দীক্ষায়, জ্ঞানে, বিজ্ঞানে, প্রযুক্তিতে উন্নত সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে। কারো কাছে মাথা নত করে নয়।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে সকাল সোয়া ১১টায় টুঙ্গিপাড়ার সমাবেশ ও বেলা ২ টায় কোটালীপাড়ার সমাবেশস্থলে পৌঁছান এবং সমাবেশে জাতীয় পতাকা নেড়ে জনতাকে শুভেচ্ছা জানান। সমাবেশটি একটি জনসমুদ্রে পরিণত হয়। টুঙ্গিপাড়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ আবুল বশার খায়েরে সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মো. বাবুল শেখের সঞ্চালনায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, রেড ক্রিসেন্টের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন, অভিনেতা মীর সাব্বির, অভিনেত্রী তারিন জাহান এবং কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ভবেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে ও সাধারন সম্পাদক আয়নাল হোসেন শেখের সঞ্চালনায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলির সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য কাজী আকরাম উদ্দীন আহম্মেদ, প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকার উন্নয়ন প্রতিনিধি শহীদ উল্লা খন্দকার, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম এমপি, শেখ হেলাল উদ্দীন এমপি, শেখ সারহান নাসের তম্ময় এমপি, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুব আলী খান, সাধারন সম্পাদক জিএম সাহাব উদ্দিন আজম, কোটালীপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান বিমল কৃষ্ণ বিশ্বাস, কোটালীপাড়ার পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান হাজরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, শেখ হাসিনার নিজের নির্বাচনী এলাকার এ জনসভায় যোগ দিতে ভোর থেকেই জনসভাস্থলে জড়ো হতে থাকেন নেতাকর্মী ও সাধারন মানুষ। ঢাক-ঢোল, বাদ্যযন্ত্রের তালে নেচে-গেয়ে উৎসব করতে করতে নানা রঙের পোশাক পরে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে মাঠে আসেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, সমর্থকরা। সকাল ১০টা নাগাদ পুরো মাঠ কানায় কানায় ভরে গিয়ে চারপাশে ছড়িয়ে পড় জনস্রোতে। নিজের পিতৃভূমিতে বঙ্গবন্ধু কন্যার আগমনে গোটা গোপালগঞ্জ, টুঙ্গিপাড়া-কোটালিপাড়ায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। নৌকার আদলে তৈরী বিশাল মঞ্চে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে বরিশালের জনসভা শেষ করে সন্ধ্যায় শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) সড়ক পথে নিজের পিতৃভূমিতে আসেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। নির্বাচনী এ সফরে শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা। সন্ধ্যায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে বোন শেখ রেহানাকে সাথে নিয়ে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের শহীদ সদস্যরে রুহের মাগফেরাত কামনা করে ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাত করেন। গত ২০ ডিসেম্বর সিলেটে হজরত শাহজালাল (রহ.) ও হজরত শাহ পরান (রহ.) এর মাজার জিয়ারত এবং এরপর সিলেটের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে নির্বাচনী জনসভার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন আওয়ামী লীগ প্রধান। #