মাইনুল ইসলাম রাজু
আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি।
বরগুনার আমতলী পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের ওয়াবদা মিঠাবাজার সড়কে দুটি সংখ্যালঘু পরিবারকে তাদের বাপ- দাদার ভিটে মাটি থেকে উচ্ছেদের পায়তারা ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করার অভিযোগ উঠেছে স্থাণীয় এক প্রভাবশালী শিক্ষকের বিরুদ্ধে। বর্তমানে উচ্ছেদ আতংকে ওই দুই পরিবারের সদস্যরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, আমতলী পৌরশহরের ৪নং ওয়ার্ডের মিঠাবাজার এলাকার মৃত্যু স্বপন দাসের পুত্র সঞ্জীব দাস ও তার চাচা রূপক দাস বাপ- দাদা থেকে পূর্ব-পুরুষরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) থেকে ৮ শতাংশ জমি লিজ নিয়ে পরিবার- পরিজন নিয়ে বসবাস করে আসছেন। তারা শান্তিতে বসবাস করলেও বিপত্তি বাধায় ওই এলাকার প্রভাবশালী মোঃ মজিবুর রহমান মাষ্টার ও তার ভাই শাহাবুদ্দিন। তারা সরকারী ১নং খাস খতিয়ানের কোটি টাকা মূল্যের জমি বন্দোবস্ত নীতিমালা অমান্য করে, ভূমি অফিসের কাছে তথ্য গোপন করে ও অসত্য তথ্য দিয়ে ৫৬আম/১৯৮৬-১৯৮৭ কেসের মাধ্যমে ১০ শতাংশ জমি বন্দোবস্ত নিয়েছেন।
মজিবর রহমান মাষ্টার এবং তার ভাই শাহাবুদিনের নামে আমতলী উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নের ঘটখালী মৌজার জেএল নং ২৯ খতিয়ান নং ৪৩০ ও ৪২৭ এর ১৬১৬, ১৭১৫, ১৭৫১, ১৮০৪, ১৮০৫, ১৮০৬, ১৮০৭ নং দাগে ২.৫৬ একর জমি রয়েছে ও আমতলী পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডে কোটি টাকা মূল্যের রের্কডিও সম্পত্তি রয়েছে। তারপরেও দুই ভাইয়ের নামে ১০ শতাংশ খাস জমি বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে।
অভিযোগকারী সঞ্জীব দাস ও তার চাচা রূপক দাসের পিতা ও দাদা দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওই জমিতে টিনশেড ঘর তুলে বসবাস করছেন। তাদের ওই ঘরের পিছনেই মজিবুর রহমান মাষ্টার মিথ্যা তথ্য দিয়ে ১নং সরকারী খাস খতিয়ানের যে কোটি টাকা মূল্যের জমি বন্দোবস্ত নিয়েছে সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ করছেন। কিন্তু নির্মাণাধীন ভবনে যাওয়ার জন্য সঞ্জীব দাস ও রূপক দাসের ঘর দুটি না থাকলে তার অনেক জন্য সুবিধা হয়। এজন্য মজিবুর রহমান মাষ্টার একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে সঞ্জীব দাস ও রূপক দাসের পরিবারকে হয়রানী করে আসছে। ওই সংখ্যালঘূ পরিবার দুটি অসহায় ও গরীব তারা মজিবর রহমান মাস্টারের দেয়া মামলায় হাজিরা দিতে দিতে অর্থভাবে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন করছেন। এমন অবস্থা হয়েছে বর্তমানে পরিবার দুটি অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছেন। অপরদিকে মজিবুর রহমান মাষ্টার তার পুত্র মিজানুর রহমান, মাহমুদুল হাসান, তার স্ত্রী কহিনুর বেগম এবং তার ভাইয়ের স্ত্রী ছকিনা বেগমের অব্যাহত হুমকিতে তারা ওই জমি থেকে উচ্ছেদ আতংকে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বসবাস করছেন।
২০০৭ সালে ভয়াবহ ঘূর্নিঝড় সিডরে সঞ্জীব দাস ও রূপক দাসের বসবাস করার ঘর দুটো ভেঙ্গে একাকার হয়ে গেলেও মজিবর মাষ্টারের অব্যহত হুমকিতে ওই ঘরের কোন কাজ করতে পারেনি। সেই ভাংঙ্গাচুরা ঘরে সঞ্জীব দাস ও রূপক দাস পরিবার- পরিজন নিয়ে দিনমজুরী করে জিবিকা নির্বাহ করছেন।
পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ রিয়াজ উদ্দিন উদ্দিন মৃধা মুঠোফোনে বলেন, আমরা ছোট্টকাল থেকে দেখে আসছি সঞ্জীব দাস ও রূপক দাসের পরিবার এখানে বসবাস করে আসছে। মজিবর রহমান মাষ্টার তার সুবিধার জন্য হিন্দু পরিবার দুটিকে উচ্ছেদের জন্য পায়তারা চালাচ্ছেন। গায়ের জোরে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে হিন্দু পরিবার দুটি যাতে ইচ্ছা করে অন্যাত্র চলে যায় তার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। এছাড়া মজিবর রহমান মাষ্টার কোন শালিস ও বিচার ব্যবস্থাও মানেন না।
আমতলী হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অশোক কুমার মজুমদার মুঠোফোনে বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে সঞ্জীব দাস, রূপক দাসের পরিবার ওই জমিতে বসবাস করে আসছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে জমি ইজারা নিয়ে তারা ওখানে বসবাস করছেন। সেখানে মজিবর মাষ্টার যে ভাবে হিন্দু পরিবার দুটিকে হয়রানী করছেন তা মেনে নেওয়া যায়না। আমরা এ বিষয়ে প্রশাসনের উচ্চ মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
সঞ্জীব দাস ও রূপক দাস বলেন, আমাদের এই ভিটি দুটি ছাড়া আর কোন সহায় সম্বল নাই। আমরা যাবো কোথায়, আমাদের যাওয়ার আর কোন যায়গা নাই। জমি থেকে উচ্ছেদ করতে যেভাবে মজিবর মাষ্টার আমাদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করতেছে। কোর্টে হাজিরা দিতে দিতে তাতে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। অর্থভাবে পরিবার- পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন করছি। এমন অবস্থা হয়েছে বর্তমানে আমাদের দুই পরিবারের সদস্যদের অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। আমরা আমাদের পরিবার- পরিজন নিয়ে সুন্দরভাবে শান্তিত্বে বসবাস করতে চাই। মজিবর রহমান মাস্টারের হয়রানী ও অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য মানণীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ বিষয়ে মজিবুর রহমান মাষ্টার মুঠোফোনে বলেন, আমি ও আমার ভাইয়ের নামে আমতলী ভূমি অফিস থেকে ১০ শতাংশ জমি বন্দোবস্ত নিয়েছি। তথ্য গোপন করে কিভাবে জমি বন্দোবস্ত নিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন উত্তর দিতে পারেননি।
আমতলী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ নাজমুল ইসলাম এ বিষয়ে মুঠোফোনে বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।