মাইনুল ইসলাম রাজু আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি।
বরগুনার আমতলী উপজেলার সহকারী কমিশনারের (ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত ইউএনও মোঃ নাজমুল ইসলামের বিরুদ্ধে উপজেলা পরিষদে মজুরী ভিত্তিক (মাস্টার রোল) নিয়োগ পাওয়া এক নারী স্টাফকে (মালি) ধর্ষণ চেষ্টা ও যৌন হয়রানী করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভূক্তভোগী ওই নারী এ ঘটনার বিচার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।
বিষয়টি এখন আমতলীতে টক অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়, ভূক্তভোগীর স্বামী আমতলী উপজেলা পরিষদে মজুরী ভিত্তিক নিয়োগ পেয়ে ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী হিসেবে কর্মরত ছিলো। গত ৭ বছর পূর্বে তিনি মারা যাওয়ার পরে সংসারের অভাব অনটনের কথা ভেবে ভূক্তভোগী ওই নারী স্বামীর রেখে যাওয়া মজুরী ভিক্তিক মালির চাকুরীটা করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন। গত ৬ বছর পূর্বে উপজেলা পরিষদে ওই নারীকে মজুরী ভিত্তিক (মালি) পদে নিয়োগ দেয়া হয়। এতদিন তিনি ভালোভাবেই চাকুরী করে আসছেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ নাজমুল ইসলাম আমতলীতে গত ৬ মাস পূর্বে যোগদান করেন। তিনি ভারপ্রাপ্ত ইউএনওর দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ভূক্তভোগী ওই নারী স্টাফকে কারনে- অকারনে তার অফিস কক্ষে ডেকে নিয়ে যৌন হয়রানী ও তিনি কুপ্রস্তাব দেয়। এতে তিনি রাজি না হওয়ায় মাঝে মধ্যে ওই নারী স্টাফকে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে হাত দিয়ে স্পর্শ করে যৌন হয়রানী করেন। তারপর ওই নারীর ব্যবহৃত মুঠোফোন নাম্বার সংগ্রহ করে দিনে ও রাতে অন্তত ১০ থেকে ১৫ বার কল দিয়ে তাকে ডির্স্টাব করে। যা ভূক্তভোগী ওই নারী স্টাফ অফিসের অন্যান্য কর্মকতা ও কর্মচারীদের অবগত করেন। হঠাৎ করে গত বৃহস্পতিবার বিকেল অনুমান ৪টার দিকে অফিসে আসেন ইউএনওর দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশার (ভূমি) মোঃ নাজমুল ইসলাম। তখন ওই ভূক্তভোগী নারী স্টাফ (মালি) উপজেলা পরিষদের সার্ট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর (সিএ) আঃ সালামের রুমে বসে ছিলেন। এ সময় এসিল্যান্ড সেখানে গিয়ে আঃ সালামকে তার রুম থেকে বের হতে বলেন। তখন আঃ সালাম রুম থেকে বের হয়ে সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন। এসময় এসিল্যান্ড ওই নারী স্টাফকে সরকারী জমি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে প্রকাশ্যে দু’হাত দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে ঠোটে চুমো দিয়ে কামড় বসিয়ে দেয় এবং যৌন উত্তেজনায় তার শরীরের বিভিন্ন গোপন স্থানে স্পর্শ করেন। এক পর্যায়ে তার পড়নে থাকা বøাউজ ছিড়ে ফেলে ধর্ষণের চেষ্টা করে বলে ভূক্তভোগী ওই নারী স্টাফ অভিযোগ করেন। তখন ভূক্তভোগী নারী স্টাফ দৌড়ে পালিয়ে যেতে গেলে তার পড়নের শাড়ী ও বøাউজ ধরে টানা হেচরা করে ধর্ষণ চেষ্টা চালায় এসিল্যান্ড। তখন ওই ভূক্তভোগী নারী স্টাফ (মালি) চিৎকার দিলে অফিসে থাকা অন্যান্য কর্মকর্তা- কর্মচারী ও সেবা নিতে আসা গ্রহীতরা এগিয়ে গিয়ে ঘটনা প্রত্যক্ষ করেণ। এ সময় ভিকটিমকে চাকুরী বাতিল ও মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাজা দেওয়ার ভয় দেখিয়ে সহকারী কমিশানার (ভূমি) দ্রæত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেণ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা পরিষদের কয়েক জন স্টাফরা জানায়, মজুরী ভিত্তিক (মাস্টার রোল) নিয়োগ পাওয়া ওই নারী স্টাফের সাথে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) স্যারে প্রকাশ্যে ওই ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে। যা আমাদের স্টাফ ও পরিষদে সেবা নিতে আসা অনেকেই প্রত্যক্ষ করেছে। উপজেলা পরিষদে সেবা নিতে আসা কবির মালাকারসহ বেশ কয়েকজন জানায়, আমরা উপজেলা নির্বাচন অফিসে কাজ শেষ করে যাওয়ার সময় উক্ত ঘটনা প্রত্যক্ষ করি। ভূক্তভোগী ওই নারী স্টাফ বলেন, এসিল্যান্ড স্যারে প্রায়ই সময় ইউএনও স্যারের রুমে ডেকে আমাকে কুপ্রস্তাব দিতো এবং আমার শরীর স্পর্শ করতো। বিষয়টি আমি আঃ সালাম স্যার ও মঞ্জু স্যারকে জানিয়েছি। এরপর গত বৃহস্পতিবার তিনি প্রকাশ্যে আমাকে জড়িয়ে ধরে ঠোটে কামড় বসিয়ে দেয় এবং শরীরের বিভিন্ন অংঙ্গে হাত দিয়ে স্পর্শ করে যৌন হয়রানী করে ধর্ষণ চেষ্টা চালায়। আমি চিৎকার দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যেতে গেলে তিনি আমার পড়নে থাকা কাপড় ধরে টান দেয় এতে আমার কাপড় অর্ধেকেরও বেশী খুলে যায়। আমি এ ঘটনার বিচার চেয়ে নির্বাহী অফিসার স্যারের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছি। তিনি আমাকে এখন বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ নাজমুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, এটা আমার বিরুদ্ধে একটা ষরযন্ত্র। আমাকে হেও করতে ছোট্ট একটি ঘটনাকে অনেক বড় আকারে বিস্তার করছে ষরযন্ত্রকারীরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম আব্দল্লাহ বিন রশিদ মুঠোফোনে বলেন, বিষয়টি তিনি জেনেছেন। বর্তমানে তিনি ছুটিতে ঢাকায় অবস্থান করছেন। বরগুনা জেলা প্রশাসক মোঃ হাবিবুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, তিনিও বিষয়টি শুনেছেন। প্রকৃত ঘটনা জেনে তদন্ত করে সত্যতা পেলে অভিযুক্ষের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানায়।