পবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীরা “বাংলাদেশ অ্যানিমাল হাজবেন্ড্রী কাউন্সিল ২০২৩” এর প্রতিবাদে বাংলাদেশ ভেটেরিনারি এসোসিয়েশন(বিভিএ) এর আহ্বানে ঢাকায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে স্বপ্রণোদিত গণজমায়েতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছে। ২৬ই ডিসেম্বর(মঙ্গলবার) পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিভিএম এর বিভিন্ন সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীবৃন্দসহ সারা দেশের ১৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্বপ্রণোদিতভাবে সমবেত হন।
উল্লেখ্য যে, গত ১৮ ডিসেম্বর,২০২৩ এ প্রস্তাবিত বাংলাদেশ অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি কাউন্সিল আইন প্রণয়নের বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মানিত সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যার প্রতিবাদে প্রাণিসম্পদ খাতের বিভিন্ন সংগঠন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরসহ ১৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে মিছিল ও প্রতিবাদ সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ২৩ ডিসেম্বর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে একটি সংবাদ সম্মেলনেরও আয়োজন করে বাংলাদেশ ভেটেরিনারি এসোসিয়েশন (বিভিএ)। হাজবেন্ড্রি কাউন্সিল আইনের বিরোধিতা করে বিভিএ নেতারা বলেন, বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল আইন-২০১৯ থাকার পরেও নতুন করে “বাংলাদেশ অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রী কাউন্সিল আইন,২০২৩” প্রণয়ন করছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। নতুন এই আইন প্রণয়ন করা হলে প্রাণিসম্পদ বিভাগের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় বিভাজন সৃষ্টি হবে। এজন্য এনিম্যাল হাজবেন্ড্রি কাউন্সিল আইনের খসড়া প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছেন তারা।
পবিপ্রবি’র ভেটেরিনারি স্টুডেন্টস’ এসোসিয়েশন(ভিএসএ) এর সর্বোস্তরের নেতাকর্মীরা এই বিতর্কিত কাউন্সিলের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, তার ব্যাখ্যা দিয়ে ভিএসএ এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাফরুল শুভ বলেন, “একটি আইন প্রতিষ্ঠা করতে হলে, পূর্ববর্তী কোনো আইনের সাথে সেটি সাদৃশ্যপূর্ণ কিনা বা সাংঘর্ষিক কিনা কিংবা হুবহু একই কিনা- এ বিষয়গুলো অধিকতর যাচাই-বাছাইপূর্বক নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে হয়। প্রস্তাবিত বাংলাদেশ এনিম্যাল হাজবেন্ড্রী কাউন্সিল আইন,২০২৩-এ এর কোনো ছাপ পরিলক্ষিত হয় নি। বরং ইতোপূর্বে দেশের রাষ্ট্রপতি অনুমোদিত গেজেটেড আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে, একটি বিতর্কিত আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। তাছাড়া একটি কাউন্সিল গঠনের ক্ষেত্রে পেশাজীবীর দক্ষতার মান নিয়ন্ত্রক বা রেগুলেটরি বডি থাকতে হয়।কোড অব কনডাক্ট বা কোড অব ইথিকস থাকতে হবে। দক্ষতার প্রেষণে শপথ, অনুশীলন ও জবাবদিহিতা থাকতে হবে। প্রস্তাবিত কাউন্সিল ও আইন প্রণয়নের কোনো প্রয়োজনীয়তা বা নির্দেশনা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এখনো দরকার নেই।
প্রস্তাবিত আইনটি দিয়ে পশু রোগ আইন ২০০৫ এর সাথে বিরুদ্ধাচারণ করা হয়েছে। বিশেষ করে, ধারা-৭, ৮, ১২। এছাড়াও ধারা-২,১৩,১৪, ১৬,১৭তেও বিরোধ লক্ষ্য করা গেছে।
বাংলাদেশ পশু ও পশুজাত পণ্য সঙ্গনিরোধ আইন, ২০০৫ এর বিভিন্ন ধারার পাশাপাশি ধারা-৬,৭,৮ এর সাথেও প্রস্তাবিত কাউন্সিল আইনটি সাংঘর্ষিক।
মৎস্য খাদ্য ও পশু খাদ্য আইন, ২০১০ এর সাথেও বিরোধ রেখেছে প্রস্তাবিত অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি কাউন্সিল আইন,২০২৩। যা ধারা-১৫ এ লক্ষ্যণীয়।”
এছাড়াও একাধিক আইনের বিভিন্ন ধারার সাথে সাংঘর্ষিক বলে মনে করেন সাবেক এই সাধারণ সম্পাদক।
তিনি একজন ভেটেরিনারি শিক্ষার্থী হিসেবে এই বিতর্কিত কাউন্সিল গঠন ও আইন প্রণয়নের বিষয়টি দেশের জন্য অপব্যয়ের উৎস ও প্রাণিসম্পদের উন্নয়নের অন্তরায় বলে মনে করেন।
এদিকে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনিম্যাল হাজবেন্ড্রী ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীরা এই নতুন আইনে সমর্থন দিতে দেখা যায়। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমসহ , বিবৃতি ও বিভিন্ন হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে তারা আইনটি সমর্থন করছে।
ভেটেরিনারি স্টুডেন্ট’স এসোসিয়েশনের নেতাকর্মীরা জানায়, বর্তমান সচিব ড. নাহিদ রশীদ নিজে একজন এনিম্যাল হাজবেন্ড্রী গ্র্যাজুয়েট হওয়ায় সম্পূর্ণরুপে পক্ষপাতদুষ্টভাবে নিজের ডিগ্রীর নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে বিশেষ সুবিধা প্রদানের নিমিত্তে জনস্বার্থ বিরোধী এবং অপ্রয়োজনীয় এই কাউন্সিল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন। আমরা এই কাউন্সিলের প্রতিবাদ জানাই।